বর্ধমান,15 মার্চ : লুকোচুরি, কানামাছি, ডাংগুলির শৈশব আজ ধুলিমাখা স্মৃতি । কংক্রিটের জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ ঘাসে ঢাকা গালিচাগুলো । ঠাকুরমার ঝুলি, নন্টে-ফন্টেদের কদর কমছে একটু একটু করে । শৈশব আজ বন্দী স্মার্টফোনের ছোট্ট স্ক্রিনটায় । তাই কাগজের কুমির, তালপাতার সেপাই, কিংবা ডুগডুগি বাজানো গাড়ি, অথবা খেলনা বেহালাগুলো আজ আর সুর তুলছে না । পথের পাশে পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন আয়নালরা । অপেক্ষা করেন । অফিস ফেরত কোনও বাবা বলেন না, "দেখে শুনে একটা খেলনা দিন তো ।"
বাবা, ঠাকুরদার হাত ধরেই এই কাজে হাতেখড়ি ৷ তাই চাষের জমির মাটি কোপাতে জানে না এই হাত । কারখানায় মেশিন চালাতেও জানে না ৷ শুধু জানে শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে ৷ তাঁর বানানো খেলনা হাতে শিশুদের হাসি কবে যেন নিজের অজান্তেই মনের কোণে জায়গা করে নিয়েছিল ৷ তারপর থেকে সেটাই যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল ৷ নিত্য-নতুন খেলনা বানানো ৷ সেই খেলনা শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া ৷
কিন্তু এখন মোবাইলের নেশা কেড়ে নিয়েছে শৈশব ৷ এখন শিশুরা খেলনা নয়, মোবাইলে মশগুল ৷ খেলনার বিক্রি দিন দিন কমছে ৷ ফলে একটু একটু করে টান ধরছে পকেটে ৷ দু'বেলা ভরপেট খাওয়া জোটাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ৷ সবটাই বুঝছেন ৷ কিন্তু তবু খেলনা বানানো যে নেশা ৷ চাইলেও যে ছাড়তে পারছেন না ৷ আর ছেড়ে করবেনই বা কী ? তাই আজও নিজের বানানো খেলনা নিয়ে সুদূর ডায়মন্ড হারবার থেকে নিয়মিত আসেন বর্ধমান শহরে । ঘুরে বেড়ান এক জেলা থেকে অন্য জেলায় । খোঁজেন রাশি রাশি সেই রাঙা হাসিগুলো ।