পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ক্রিকেট-ফুটবলের মতোই বাঙালিকে আজও তাড়া করে পাহাড়ের অমোঘ টান, মত পর্বতারোহীদের - বাঙালি মত মাউন্টেনিয়ারিংদের

International Mountain Day: বাঙালি মানেই ক্রিকেট ফুটবলের ভক্ত । বাঙালি মানেই পাহাড় সমুদ্রের টানে হঠাৎ করে ছুটে যেতে চায় কখনও দীঘা, দার্জিলিং কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘায় । কিন্তু পাহাড়ে যেতে হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিটনেস থাকা খুবই জরুরি । কারণ পাহাড়ের প্রতি পদে বিপদের হাতছানি । শুধু তাই নয় উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দলবদ্ধভাবে সেই কাজ করতে হবে । তবে ক্রিকেট ফুটবলের মতো আজ বাঙালিও পাহাড়মুখী একথা মনে করছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ।

International Mountain Day News
ক্রিকেট ফুটবলের মতো পাহাড়ের টানে ছুটছে বাঙালি

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 11, 2023, 6:07 PM IST

বর্ধমান, 11 ডিসেম্বর: বাঙালি মানেই ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের ভক্ত । বাঙালি মানেই পাহাড়-সমুদ্রের টানে হঠাৎ করে ছুটে যেতে চায় কখনও দিঘা, দার্জিলিং কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘায় । কিন্তু পাহাড়ে যেতে হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিটনেস থাকা খুবই জরুরি । কারণ পাহাড়ের প্রতিপদে বিপদের হাতছানি । শুধু তাই নয় উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দলবদ্ধভাবে সেই কাজ করতে হবে । তবে ক্রিকেট-ফুটবলের মতোই আজও বাঙালি পাহাড়মুখী একথা মনে করছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় । আটের দশক থেকে পাহাড়কে ভালোবেসে তাঁর পথচলা শুরু । এখন তিনি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বিভিন্ন অংশে যাত্রা শুরু করেছেন । সেখান খেকেই ইটিভি ভারতকে শানালেন পাহাড়ে ওঠার রোমাঞ্চকর গল্প ৷

আজ 11 ডিসেম্বর অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস ৷ এবারের পর্বত দিবসের থিম 'রিস্টোরিং মাউনটেন ইকোসিসটেম' (Restoring mountain ecosystems) অর্থাৎ পর্বতের ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার করা । পর্বত আরোহনকারীদের মতে লকডাউনের জেরে পার্বত্য এলাকায় জলবায়ুর একটা ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল । বায়ুমণ্ডলের দূষণের মাত্রা ব্যাপক হারে কমে গিয়েছিল । কিন্তু ফের আগের পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে ।

লকডাউনের জেরে দেশ জুড়ে সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় জলবায়ুর একটা পরিবর্তন দেখা দেয় । যেখানে আবহাওয়াগত পরিবর্তনের পাশাপাশি দূষণের মাত্রাও অনেকাংশে কমে যায় । জনজীবন স্তব্ধ থাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায় । ফলে শিলিগুড়ি থেকে পরিস্কারভাবে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা । এমনকি দার্জিলিংয়ের নাইটিঙ্গেল পার্ক থেকেও অনেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ।

শুধু তাই নয় পঞ্জাবের জলন্ধর শহর থেকে 125 মাইল দূরে হিমালয় পর্বতের ধওলাধর রেঞ্জও দেখে অনেকে বিস্ময়প্রকাশ করেন । মাইন্টেনিয়ারদের মতে, বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কম থাকলে যে কোনও পর্বতের শৃঙ্গ অনেক পরিস্কারভাবে দেখা যায় । এমনকি মাঝেমধ্যে অনেক দূরের সমতল এলাকা থেকেও তা পরিস্কারভাবে চোখে পড়ে ৷ বিগত দু'বছরে করোনার কারণে জনজীবন স্তব্ধ থাকায় দূষণের মাত্রা অনেকগুন কমে যায় । তারা আবহাওয়া দফতরের কাছ থেকে জেনেছেন, যদি তাপমাত্রা 10 ডিগ্রির নীচে না নামে তাহলে এলাকা জুড়ে প্রচুর কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা থাকে । ফলে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কম থাকলে অনেক শৃঙ্গ পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়া যায় । তাই পাহাড়ের পরিবেশকে ঠিক রাখার জন্য দেশগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে । মাউন্টেনিয়ারিং দের মতে, যারা পাহাড়ে যেতে ভালোবাসেন তারা কোনওভাবেই পাহাড়ের পরিবেশকে নষ্ট করে না ।

মাউন্টেনিয়ার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমঘাট পর্বতমালা যাওয়ার পথে তামিলনাড়ু কোদাইকানাল থেকে ইটিভি ভারতকে ফোনে জানান, 'ছোট বেলায় ক্রিকেট-ফুটবল খেলেছি । খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পাই । তাই আর খেলতে পাইনি । এদিকে বর্ধমানের একটা ক্লাব 'ভ্রামণিক' এর হাত ধরে আটের দশকে পাহাড়ে ঘুরতে যাই । সেখানে বিদ্যুৎ রায়ের হাত ধরে পাহাড়কে ভালোবাসতে শিখি । তার হাত ধরে একে একে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প, কাশ্মীর থেকে দার্জিলিং, নেপালের হিমালয়ের বিভিন্ন অংশ, গাড়োয়াল হিমালয়ের বিভিন্ন অংশ, হিমাচল প্রদেশে কে-আর- ওয়ান নামে একটা পিক ঘুরে আসি । পশ্চিমঘাট পর্বতমালাকে জানবার জন্য গোয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছি । এবার শুরু করেছি তামিলনাড়ুর কোদাইকানাল থেকে মুন্নার পর্যন্ত । মুন্নার যাওয়ার পরে কেরালার দিকে যাত্রা শুরু করবো । যাত্রা শেষ করতে পাঁচ থেকে সাত বছর লাগবে । এদিকে শেষ করে মহারাষ্ট্রের দিক থেকে শুরু করবো ।'

তাঁর মতে, বিগত দিনের থেকে পাহাড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেড়েছে । ফলে দেখা যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম পাহাড়ের টানে ছুটতে শুরু করেছে । যদিও আগের থেকে সুযোগসুবিধা অনেক সহজ হয়েছে । বাড়ছে ট্রেকিংয়ের আগ্রহ । আগে ট্রেকিং করতে হলে নেপালের সাহায্য লাগতো । গত কয়েকবছর ধরে আমাদের দেশেও সেই সুযোগটা শুরু হয়েছে । আগে একটা ছোট ট্রেক করতে গেলেও অনেক পরিকল্পনা করতে হতো ।যোগাযোগ ব্যবস্থা অত উন্নত না থাকায় একটা পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে চিঠি লিখে নিজের গাইড ঠিক করতে হত । পোর্টার বলে রাখতে হত । টেন্ট বয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হত । এখন সেই গাইডরাই নিজেদের মতো করে এজেন্সি খুলেছে । ফলে আমাদের আলাদা করে সমস্ত কিছু নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হয় না । তাদের শুধু নির্দিষ্ট তারিখ বলে দিলেই খাওয়া থেকে সমস্ত কিছু তারা ব্যবস্থা করে রাখে । এর ফলে অনেক সহজ হচ্ছে । আর এখন অনলাইনের মাধ্যমেও নতুন প্রজন্ম সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে তারা রীতিমতো পাহাড়ে যাচ্ছেও । তবে টাকা পয়সাটা একটা বড়ো ফ্যাক্টর । এক্ষেত্রে ফিটনেস ধরে থাকাটা খুব জরুরি । এখন এভারেস্ট অভিযানের ক্ষেত্রেও অনেক সুযোগ এসেছে । এক্ষেত্রেও এজেন্সির মাধ্যমেই যেতে হবে ।

কারণ কেউ যদি এজেন্সি বাদ দিয়ে নিজে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় তাহলে তাকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে । আগে এভারেস্ট যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে এক দেড় কোটি টাকা খরচ পড়ত এখন তো আঠারো কুড়ি লক্ষ টাকা জোগাড় করতে পারলেই এভারেস্টে যাওয়ার স্বপ্ন কেউ দেখতে পারে । সেক্ষেত্রে মাস খানেকের প্রোগ্রাম । এপ্রিল বা মে মাসের শেষের দিকে সামিট শুরু হলে মে-জুন মাসের দিকে কমপ্লিট হয়ে যাবে । এভারেস্ট যাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় এপ্রিল- মে মাস । তারপর সেখানের আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। গাড়োয়াল হিমালয়ের ক্ষেত্রে মে জুন জুলাই মাসকে বেছে নেওয়া হয় ।

তবে অগস্ট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামিটগুলি হয় । এরপরেও সবকিছু নির্ভর করে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার উপর । যেমন চলতি বছরে মে মাস অর্থাৎ প্রি-মনসুন সময় খুব খারাপ ছিল । ফলে গাড়োয়াল হিমালয় কিংবা কুমায়ুন হিমালয়ের কোনও সামিট করা সম্ভব হয়নি । আবার দেখা গেল চলতি বছরে অগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে আবহাওয়া খুব ভালো ছিল । অথচ আমরা যখন প্রথম প্রথম ট্রেকিং শুরু করেছিলাম তখন শুনেছিলাম প্রি-মনসুন পাহাড়ে যাওয়ার সময়। জুলাই মাস থেকে মাস খানেক ধরে গাড়োয়াল হিমালয় যাওয়া বন্ধ থাকবে। আবার সেপ্টেম্বর মাসের পরে শুরু হবে।কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য আজ যে কোনও সময়েই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যেতে পারে । তবে মানসিক শক্তি রাখতেই হবে । যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শিক্ষা নিতে হবে । শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিটনেস রাখতে হবে । সেজন্য আলাদা করে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য শরীরচর্চা করতে হবে । যে কোনও সময়েই মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । এজন্য রাজ্যে অনেক ছোট বড়ো সংস্থা আছে যারা প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকে । বিপদে পড়লে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করা যাবে না । একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করতে হবে । একটাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে । পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখতে হবে ।

তিনি আরও বলেন, মাউন্টেনের ইকো সিস্টেম কখনও যারা পাহাড়ে যেতে ভালোবাসেন তারা নষ্ট করবেন না । ইকো সিস্টেম ধংস হচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেট সেক্টর গুলোর হাত ধরে । এছাড়া বিভিন্ন দেশের অবস্থান ইকোসিস্টেমকে খারাপ করছে । এর মুখ্য কারণ পরিবেশ দূষণ । সারা বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং শুরু হয়েছে । ফলে বৃহৎ দেশগুলি যদি একটু সচেতন হয় তাহলে বাঁচবে হিমালয় বাঁচবে বাকিদেশগুলি ।

আরও পড়ুন:

  1. রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না-হলে শরীরে এই সকল ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে
  2. এইডস মানেই কি নিশ্চিত মৃত্যু ? আজই ঝেড়ে ফেলুন ভুল ধারণাগুলি
  3. ঘাড় ব্যথা বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে ! এই পদ্ধতিগুলি অবলম্বনে নিজেকে রক্ষা করুন

ABOUT THE AUTHOR

...view details