বর্ধমান, 11 অক্টোবর:ভাগ কিংবা বিচ্ছেদ, এই শব্দের সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত । কিন্তু কেউই আমরা সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চাই না । কোনও পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য এই অবস্থা সৃষ্টি হলে সেটা যে কতখানি ভয়াবহ হতে পারে । সেই বিষয়ই থিমের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চলেছে বর্ধমান শহরের 2 নং শাঁখারিপুকুরের বিবেকানন্দ সেবক সংঘ । 19তম বর্ষে তাদের এ বছরের থিম ভাবনা '52 বছর পরেও একাত্তরের মা তেইশেও কাঁদে ! কাঁটাতার !'
আসলে পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীরা আশ্রয় নেয় মূলত এপার বাংলায় । অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গ অসম ও ত্রিপুরায় । তারা জীবন ও জীবিকার স্বার্থেই এখানে আশ্রয় নিয়েছিল । এই পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত মানুষ এই রাজ্যে আশ্রয় নেয় তাদেরই নাম দেওয়া হয় উদ্বাস্তু । আবার কোথাও কোথাও অঞ্চল বিশেষে তাদের বলা হয় বাঙাল কিংবা ভাটিয়া ।
এই রাজ্যে আসার পরে তাদের কী অবস্থা হয়েছিল কিংবা আজ 52 বছর পরেও তাদের কোন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় কিংবা নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে কীভাবে সমস্যায় পড়তে হয় মণ্ডপের প্রতিটা কোনায় কোনায় থিমের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । মূলত খড়, মাটি, বাঁশ, কাঠ ও প্লাই দিয়ে বিভিন্ন মডেল তৈরির কাজ চলছে । বিবেকানন্দ সেবক সংঘের পুজোর যে হোর্ডিং করা হয়েছে সেখানেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাঁটাতারকে । সেই হোর্ডিং লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, কাঁটাতার মানেই সেখানে আগুন জ্বলছে । 52 বছর পরেও, একাত্তরের মা তেইশেও কাঁদে সেটা যে কতখানি বাস্তব তা বোঝা যায় যখন হোর্ডিংয়ের বিভিন্ন দিকে অবহেলা, বাঙাল, অবিচার, রিফিউজি, অত্যাচার, শাস্তি, ওপার বাংলা, পূর্ব পাকিস্তান ইত্যাদি শব্দের দিকে যখন চোখ যায় ।
আরও পড়ুন : প্রতিমার সাজ-রফতানিতে ভাটা, পুজোর মুখে হতাশ কুমোরটুলির শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা
এই বিষয়ে ক্লাবের সম্পাদক তমালকান্তি মণ্ডল বলেন,"এই বছরে ক্লাবের পঞ্চাশতম বর্ষ । যদিও পুজোর বয়স 19 বছর । এবারে থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে 'একাত্তরের মা তেইশেও কাঁদে- কাঁটাতার'। মূলত সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা বিতাড়িত কিংবা অত্যাচারিত হয়ে এই বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিল পরে তাদের কী অবস্থা হয়েছিল তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । শুধু তাই নয়, এখানে আসার পরে এতগুলো বছর কেটে গেলেও তাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ।তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল করতে হচ্ছে । আমরা দেখাতে চেয়েছি যারা প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন তাঁরা সবাই মানুষ । আমরা সবাই এক । তাই মণ্ডপে ভাষা আন্দোলন থেকে সাধারণ মানুষের কী ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল তা তুলে ধরা হচ্ছে ।"