বর্ধমান, 17 নভেম্বর: বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে কাটোয়ার দিকে প্রায় আট কিলোমিটার গেলেই পালিতপুর গ্রাম । গ্রামের রাস্তা ধরে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার গেলে দেখা যাবে ধান জমির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ক্যানেল । এখন সেই ক্যানেলে জল প্রায় নেই বললেই চলে । তার পাশেই আছে বাঁশঝাড় । দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই সেই বাঁশেরঝাড়ের উপরে জীবনের প্রায় 25টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পালিতপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকু রায় । অবাক লাগলেও এটাই সত্যি ।
ন্যাশানাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে 'দ্য লেজেন্ড অফ মাইক ডজ' নামে একটা সিরিজ রীতিমতো সাড়া ফেলেছিল । আধুনিক সভ্যতার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে মাইক নামে এক ব্যক্তি প্যাসিফিক নর্থ-ওয়েস্ট রেনফরেস্টের কাছে গাছের ডালে ঘর বেঁধেছিলেন । সেটা ছিল টেলিভিশনের একটা সিরিজ । আর বাস্তব জগতে সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে বর্ধমানের পালিতপুরের লোকু রায় ঘর বেঁধেছেন বাঁশঝাড়ের মাথায় ।
স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে গ্রামেই ছিল তার অভাবের সংসার । বছর 25 আগে হঠাৎ আগুনে পুড়ে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয় । তারপর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে লোকু । দিনের পর দিন এইভাবে থাকতে থাকতে সে বাঁশগাছের উপরে মাচা বেঁধে থাকতে শুরু করে । পরে সেখানেই বাঁশ, প্লাস্টিক, চট ও দড়ি দিয়ে কোনওরকমে একটা মাথা গোঁজার জায়গা করে নেন লোকু । বাঁশঝাড়ের চারপাশে বেড়া দিয়ে ছোট্ট একটা বাগানও বানিয়ে ফেলেছেন তিনি । সেখানে ছোট ছোট ফুল গাছ থেকে শুরু করে অন্যান্য গাছও লাগিয়েছেন । মাটি কেটে ডোবা তৈরি করে ক্যানেলের সঙ্গে তা জুড়ে দিয়েছেন । বর্ষায় সেখানে মাছও ধরেন ৷ ভোর হতে না-হতেই বাগানের পরিচর্যা করে লোকু মাঠে বেরিয়ে পড়েন । টুকটাক কাজ করে যা টাকা পান তা নিয়ে দুপুর নাগাদ গ্রামেই মেয়ের বাড়িতে চলে যান । সেখানে অল্প কিছু খাবার খেয়ে বাঁশতলাতেই বিশ্রাম । পরে এখানে ওখানে একটু ঘুরে অন্ধকার নামতেই বাঁশের কুঠুরিতে ফিরে যাওয়া । সেখানে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতি রাত কাটে তাঁর ৷