খন্ডঘোষ, 14 অগস্ট: 1929 সালের 8 এপ্রিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক দিন ৷ ওইদিনই দিল্লিতে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের সেন্ট্রাল লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলি বা পার্লামেন্ট হাউসে বোমা ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত সেই । পাবলিক সেফটি ও ট্রেড ডিসপুট বিলের বিরোধিতা করে সেদিন ওই পদক্ষেপ করেছিলেন এই দুই বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ সেই বোমা মারার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে ।
তখন 1928 সাল । লাহোরে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে মিছিল শুরু করেন লালা লাজপত রাই । তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে মিছিলে অংশ নেয় । স্বাভাবিকভাবেই যা ব্রিটিশ পুলিশের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল । পুলিশ সেই বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে পারেনি । তখন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জেমস স্কট লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন । লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হন লালা লাজপত রাই । এর কিছুদিন পরে তিনি মারা যান । এই ঘটনা কানে যায় ভগৎ সিংয়ের । ঘটনার প্রতিবাদে জেমস স্কটকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ভগৎ সিং সহ তার সহযোগীরা । কিন্তু তারা জেমস স্কট কে মারতে গিয়ে ভুল করে স্যান্ডার্স কে হত্যা করে বসেন । এরপর অনেক জায়গা ঘুরে ভগৎ সিং, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর হাত ধরে চলে আসেন বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে । সেখানে বটুকেশ্বর দত্তর বাড়িতে ভগৎ সিং আত্মগোপন করে থাকেন । কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ সেই আত্মগোপনের খবর পেয়ে যায় । সেই সময় বটুকেশ্বর দত্তর পাশের বাড়ি ছিল ঘোষেদের বাড়ি । সেই বাড়িতে পাতাল ঘরে আশ্রয় নেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত ।
শোনা যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা মারার পরিকল্পনা ওই পাতাল ঘরে বসেই হয়েছিল । এরপর বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং বিভিন্ন পথ ঘুরে দিল্লি পৌঁছে যান । সেখানে তারা পার্লামেন্টে গিয়ে বোমা ছোঁড়েন । এরপর তারা ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দেন । সেই দিক দিয়ে দেখলে ওই বাড়িটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৷ বর্তমানে ওই ঘোষবাড়ি সরকার অধিগ্রহণ করেছে । বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে । তবে বাড়িতে ঢুকলে সহজে পাতাল ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না ।