এনায়েতপুর, 4 মার্চ: সময়ের দাগ রয়ে গেছে ! এখনও হার্মাদ-মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ের দগদগে ক্ষত সিপিআইএম পার্টি অফিসের গায়ে ৷ তবে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার একদশক পর আপাত শান্ত এককালের সন্ত্রাস-কবলিত এনায়েতপুর ৷ চাষবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে থাকা গ্রামবাসীরা চান না ফিরুক সেই ভয়ঙ্কর দিন !
মেদিনীপুর শহর থেকে চাঁদড়া হয়ে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার পথে পড়ে এনায়েতপুর । জঙ্গলমহলের একাংশ ৷ বাম আমলের শেষ দিকে মাও ও হার্মাদ বাহিনীর দাপট দেখেছিল এলাকা ৷ মূলত 2008 সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল অঞ্চলে মাওবাদীদের গতিবিধি বেড়ে যায় । খুন হতে থাকে সাধারণ মানুষ থেকে সিপিআইএম-এর নেতা কর্মীরা । বাদ যায়নি পাকা বাড়ির মালিক রেশন ডিলাররাও । সেই সময় না-কি মাওবাদীদের হাত থেকে বাম নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে জঙ্গলমহলে গড়ে উঠেছিল 73টি 'হার্মাদ ক্যাম্প'৷ গ্রামবাসীদের মুখে শোনা যায়, হার্মাদরা দিনের পাশাপাশি রাতেও টহল দিত এলাকা । তাদের সঙ্গে থাকত বন্দুক-বোমা-গুলি । অভিযোগ ছিল, মাওবাদী ঠেকানো হার্মাদরা এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জুলুম করত ৷ জোর করে টাকা-পয়সা নিত ৷ সব মিলিয়ে একদিকে মাওবাদী, অন্যদিকে হার্মাদদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এনায়েতপুর ।
2009 সালের 21 সেপ্টেম্বর ৷ মহালয়ার দিন ঘটে ভয়ঙ্করতম ঘটনাটি । ওইদিন সন্ধে থেকে শুরু হয় মাওবাদী-হার্মাদদের গুলির লড়াই । গ্রামবাসীদের কথায়, এই ঘটনায় মারা যায় বহু মাওবাদী ও হার্মাদ ৷ শেষ পর্যন্ত মাওবাদীরা পিছু হটে ৷ এদিকে নজিরবিহীন আতঙ্কের পরিস্থিতিতে রাতেই গ্রামছাড়া হন বহু গ্রামবাসী । সেদিনই মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয় সিপিআইএম পার্টি অফিস । এমন দিনে-রাতে খুন, বোম-গুলি-বন্দুক আর বারুদের গন্ধই ছিল এনায়েতপুরের চেনা চরিত্র ৷ 2011 সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে বদলায় পরিস্থিতি ৷ বর্তমান শাসক দল তৃণমূলকে নিয়ে কিছু ক্ষোভ থাকলেও গ্রামবাসীরা বলছেন, অনেক ভালো আছি ৷ তাঁদের কথায়, আগের পরিবেশ নেই ৷ চাষাবাদ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোই হচ্ছে । আগের থেকে রাস্তাঘাটও ভালো হয়েছে ।
আরও পড়ুন : চাকরি না পেলে ফের মাওবাদী সংগঠনে, হুঁশিয়ারি আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের