পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভোটে যেন না গর্জায় বন্দুক, প্রার্থনা রক্তাক্ত এনায়েতপুরের - পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন 2021

2009 সালের 21 সেপ্টেম্বর ৷ মহালয়ার দিন ঘটে ভয়ঙ্করতম ঘটনা । ওইদিন সন্ধে থেকে শুরু হয় মাওবাদী-হার্মাদদের গুলির লড়াই । গ্রামবাসীদের কথায়, এই ঘটনায় মারা যায় বহু মাওবাদী ও হার্মাদ ৷ এখন পরিবেশ বদলে গেছে ৷ এই পরিবেশ বজায় থাকুক চায় গ্রামবাসীরা ৷

enayetpur-once-restless-for-mao-harmad-wants-peace-after-decades
enayetpur-once-restless-for-mao-harmad-wants-peace-after-decades

By

Published : Mar 4, 2021, 10:45 PM IST

এনায়েতপুর, 4 মার্চ: সময়ের দাগ রয়ে গেছে ! এখনও হার্মাদ-মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ের দগদগে ক্ষত সিপিআইএম পার্টি অফিসের গায়ে ৷ তবে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার একদশক পর আপাত শান্ত এককালের সন্ত্রাস-কবলিত এনায়েতপুর ৷ চাষবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে থাকা গ্রামবাসীরা চান না ফিরুক সেই ভয়ঙ্কর দিন !

মেদিনীপুর শহর থেকে চাঁদড়া হয়ে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার পথে পড়ে এনায়েতপুর । জঙ্গলমহলের একাংশ ৷ বাম আমলের শেষ দিকে মাও ও হার্মাদ বাহিনীর দাপট দেখেছিল এলাকা ৷ মূলত 2008 সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল অঞ্চলে মাওবাদীদের গতিবিধি বেড়ে যায় । খুন হতে থাকে সাধারণ মানুষ থেকে সিপিআইএম-এর নেতা কর্মীরা । বাদ যায়নি পাকা বাড়ির মালিক রেশন ডিলাররাও । সেই সময় না-কি মাওবাদীদের হাত থেকে বাম নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে জঙ্গলমহলে গড়ে উঠেছিল 73টি 'হার্মাদ ক্যাম্প'৷ গ্রামবাসীদের মুখে শোনা যায়, হার্মাদরা দিনের পাশাপাশি রাতেও টহল দিত এলাকা । তাদের সঙ্গে থাকত বন্দুক-বোমা-গুলি । অভিযোগ ছিল, মাওবাদী ঠেকানো হার্মাদরা এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জুলুম করত ৷ জোর করে টাকা-পয়সা নিত ৷ সব মিলিয়ে একদিকে মাওবাদী, অন্যদিকে হার্মাদদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এনায়েতপুর ।

দশক পেরিয়ে শান্তির খোঁজে এনায়েতপুর

2009 সালের 21 সেপ্টেম্বর ৷ মহালয়ার দিন ঘটে ভয়ঙ্করতম ঘটনাটি । ওইদিন সন্ধে থেকে শুরু হয় মাওবাদী-হার্মাদদের গুলির লড়াই । গ্রামবাসীদের কথায়, এই ঘটনায় মারা যায় বহু মাওবাদী ও হার্মাদ ৷ শেষ পর্যন্ত মাওবাদীরা পিছু হটে ৷ এদিকে নজিরবিহীন আতঙ্কের পরিস্থিতিতে রাতেই গ্রামছাড়া হন বহু গ্রামবাসী । সেদিনই মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয় সিপিআইএম পার্টি অফিস । এমন দিনে-রাতে খুন, বোম-গুলি-বন্দুক আর বারুদের গন্ধই ছিল এনায়েতপুরের চেনা চরিত্র ৷ 2011 সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে বদলায় পরিস্থিতি ৷ বর্তমান শাসক দল তৃণমূলকে নিয়ে কিছু ক্ষোভ থাকলেও গ্রামবাসীরা বলছেন, অনেক ভালো আছি ৷ তাঁদের কথায়, আগের পরিবেশ নেই ৷ চাষাবাদ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোই হচ্ছে । আগের থেকে রাস্তাঘাটও ভালো হয়েছে ।

আরও পড়ুন : চাকরি না পেলে ফের মাওবাদী সংগঠনে, হুঁশিয়ারি আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিরও দাবি, সেই দিন অস্ত গেছে ৷ তিনি বলেন, "সন্ত্রাস কবলিত এনায়েতপুর আর নেই । হার্মাদ ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছি ৷ আমাদের আমলে রাস্তাঘাট হয়েছে ৷ চাষাবাদ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে এলাকায় ৷ সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা ।" তৃণমূল নেতার অভিযোগ, "বিজেপি সেই হার্মাদদের নিয়ে ফের অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে । "

মাও গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিল সিপিআইএম-এর এই পার্টি অফিস

সিপিআইএম-এর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় অবশ্য উল্টো সুর গাইলেন । তাঁর কথায়, "সেই সময় মাওবাদীদের দিয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করেছিল তৃণমূল । এখন বিজেপিকে নিয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে ।"

বিজেপি জেলা সভাপতি সমিত দাস অবশ্য বলছেন, "এলাকা আগের থেকে শান্ত ৷" তবে তাঁর অভিযোগ, "এই সরকার যেভাবে দুষ্কৃতীদের সুযোগ দিচ্ছে, উন্নয়ন না করে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে, সেক্ষেত্রে এলাকায় শান্তি থাকলেও কতদিন থাকবে, তা বলা কঠিন ৷"

এমনিতে শান্ত, কিন্তু সামনে ভোট ৷ নির্বাচনী পরিস্থিতিতে এনায়তপুরের বাতাসে ফিরবে না তো বারুদের গন্ধ, স্বজনহারা হবে না তো মানুষ ! সংশয়ে রাজনৈতিক মহল ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details