পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

টুসু ভাসান দিয়ে শেষ হল মকর পরব

অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি বা ছোটো মকরের দিন ডিনিমাই স্থাপন করে আরাধনা করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষরা ৷ একমাস ধরে টুসু গীত ও বিভিন্ন নিয়ম পালন করা হয় ৷ মকর সংক্রান্তির দিন টুসুকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয় ৷ শ্বশুরবাড়ি পাঠানো মানে টুসুকে বিসর্জন দেওয়া হয়। টুসু আসলে এক কৃষি উৎসব ৷ নতুন ধান ঘরে এসেছে ৷ আর সেজন্য় আনন্দ উৎসব করা ৷ নতুন ধানের থেকে তৈরি হয় চাল ৷ আর সেই চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করেন নানা পিঠে ৷

Kurmi utsav
কুড়মি সম্প্রদায়ের টুসু উৎসব

By

Published : Jan 15, 2021, 12:01 PM IST

Updated : Jan 15, 2021, 2:36 PM IST

মেদিনীপুর 15 জানুয়ারি : স্বচ্ছ ভারত অভিযান তো সেদিনের কথা ৷ তার বহু আগে আদিবাসী সমাজের এক অনুষ্ঠানে পরিবেশকে স্বচ্ছ রাখার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় ৷ এখনও সেই রীতি পালন করা হয় ছোটোনাগপুরের কুড়মি, ভুমি, মুন্ডা, কোল সহ অন্যান্য আদিবাসী সমাজে ৷ সম্প্রদায় ভেদে রীতি নিয়মের পার্থক্য থাকলেও পরিবেশকে স্বচ্ছ রাখার ক্ষেত্রে মূল সুর একই ৷ পরিবেশকে স্বচ্ছ রাখার সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে কৃষি গতিশীলতা বজায় রাখতে বীজ সংরক্ষণ করা হয় ৷ ভারতের ইতিহাসে কৃষিকাজে অন্য়তম পথিকৃৎ ভাবা হয় কুড়মিদের ৷ জঙ্গলমহল মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামজুড়ে পালন করা হয় ছোটো মকর ৷ অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিকে বলে ছোটো মকর ৷ এইদিন ডিনিমাই স্থাপন করে, একমাস ধরে তার আরাধনা করা হয় ৷ টুসু গীত ও বিভিন্ন রীতি-নিয়ম, যা কুড়মিদের ভাষায় 'নেগ নেগাচার' পালন করা হয় । মকর সংক্রান্তির দিন টুসুকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয় ৷ শ্বশুরবাড়ি পাঠানো মানে টুসুকে বিসর্জন দেওয়া হয়। ডিনিমাই গঠন করা হয় গোবরের ওপর বিভিন্ন বীজ স্থাপন করে। আর এই শস্যবীজের উপর সিন্দুর, ফুল দিয়ে বিভিন্ন উপাচার পালন করা হয়। আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়ের মতে, এটা হল বীজ সংরক্ষণের একটা ভালো উপায়।

মকর পরব


সমগ্র ছোটোনাগপুরের কুড়মি সহ অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব হল এই মকর বা টুসু পরব। এর শেষের দিকের কয়েকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ আঁউড়ির দিন বিভিন্ন নেগ নেগাচার পালন করা হয়। চাঁউড়ির জুগনীবাইটা অর্থাৎ পরিবার এবং সমাজের অনিষ্টকারী ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলি জঙ্গলের নির্জন স্থানে ফেলে আসা হয়। পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার একটা প্রয়াস। আজ স্বচ্ছ ভারত অভিযান ঘিরে কত ঢাক-ঢোল পেটানো হচ্ছে সরকারি খরচে, অথচ কুড়মি সম্প্রদায়ের পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার এই নীরব প্রয়াস কতজন জানে ? এই দিন খড়ের তৈরি একটি বিশেষ আধারে চাল রাখা হয়, যাকে চালপুড়া বলা হয়। তারপরের দিন বাঁউড়ি ৷ অর্থাৎ এই দিন বাড়তি খাদ্যশস্য ভবিষ‍্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয় পুড়ায়। সবে নতুন ধান কেটে কৃষক তা থেকে চাল তৈরি করেছে ৷ সেই চালের গুঁড়ি দিয়েই পিঠেপুলি তৈরি হয়, যার অন‍্যতম হল মাংসপিঠা। এই দিন বাড়ির মেয়েরা সারা রাত জেগে থেকে টুসু গীত ও টুসু সেবা(সারা রাতে 16 বার) করেন। বাকিদের রাতের বেলায় পায়ে তেল দিয়ে ঘুমাতে হয়। এই সময়ে খুব ঠান্ডার কারণে পায়ে সরিষার তেল ভালো করে মালিশ করে ঘুমানো হয়।

আরও পড়ুন :সামিয়ানা খাটিয়ে বুলবুল পাখির লড়াইয়ের আসর গোপীবল্লভপুরে

পরেরদিন মকর সংক্রান্তি অর্থাৎ কুড়মালি বছরের শেষ দিন। এইদিন মকর ডুব ও টুসু ভাসান। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান সেরে নতুন বস্ত্র পরিধান করেন সবাই। বিভিন্ন জায়গায় চলে বিভিন্ন নাচ গানের আসর। প্রকাশিত হয় কুড়মালি নববর্ষের ক‍্যালেন্ডার।এভাবেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা সহ সমস্ত জেলার কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ পুরাতন বছরকে বিদায় জানায়। আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়ের শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, " টুসু শুধু দেবীই নয়, আমাদের বাড়ির মেয়ে। আমরা প্রকৃতির পুজারি। তুস থেকেই টুসু ৷ তাই কৃষিজীবী কুড়মি সম্প্রদায় কৃষির সূচনা দিয়ে যেমন কুড়মালি নববর্ষ বরণ করেন তেমনই টুসু ভাসান দিয়ে শেষ করেন। তিনি সবাইকে কুড়মালি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।" এভাবেই বছরের পর বছর ধরে টুসু উৎসব এবং কুড়মালি উৎসব পালন করে আসছেন জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষজন।

Last Updated : Jan 15, 2021, 2:36 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details