ঘাটাল, 5 জানুয়ারি : বর্ষাকাল এলেই চিন্তায় থাকেন ঘাটালবাসী ৷ এক ইঞ্চি বাড়লেই শীলাবতী নদীর জলে ডুবে যায় দু'ধারের গ্রামের পর গ্রাম ৷ প্রতি বছর একই ছবি ফুটে ওঠে ঘাটালে ৷ তবে, ছবিটা এবার বদলাবে ভেবেছিলেন ঘাটালের বাসিন্দারা ৷ করা হয়েছিল অনেক পরিকল্পনা ৷ তৈরি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ৷
ঘাটালের মাস্টার প্ল্যান কী ?
বর্ষাকালে ঘাটালের অঞ্চলগুলি শীলাবতী নদীর জলে ডুবে যাওয়ায় আতঙ্কে থাকে সাধারণ মানুষ ৷ এমনকী, চেতুয়া, দাসপুর 1 ও 2 ব্লকের মতো অঞ্চলগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ এই অবস্থা থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচাতেই শীলাবতী নদীর উপর একটি 6 মিটার বাঁধ নির্মাণ এবং ঘাটালে একটি পাম্প (5000 কিউসেক ক্ষমতা সহ) স্থাপন করা হবে বলে ঠিক করা হয় ৷ সঙ্গে দাসপুর দুর্বাচটী নদী ও চন্দ্রেশ্বর-গোমরাই-পায়রাশি খাল সংস্কার, পলাশপাই নদীর উপরেও সেতু নির্মাণ করা হবে ৷ 1238 কোটি টাকার এই মাস্টার প্ল্যানে কেন্দ্র ও রাজ্য 25-75 শতাংশ টাকা দিয়ে তৈরি হবে এই প্ল্যান ৷
ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটালের মানুষকে বন্যার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করার জন্য সেচ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ এই 'মাস্টার প্ল্যান' বিভাগটি তৈরি করেছিলেন ৷ 2014 সালে ছাড়পত্রের জন্য কেন্দ্রকে এই পরিকল্পনা জানান ৷ শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে অনুমোদন দেয় ৷ তবে, তারা 1238 কোটি টাকার প্রকল্পের জন্য কোনও তহবিল বরাদ্দ করেনি ৷ কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রীর মুখ্য সচিব রাজ্য সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে একই কথা জানিয়েছেন ৷ কেন্দ্র এই প্রকল্পের ব্যয় বহন করবে না বলে জানিয়ে দেয় ৷ রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য তহবিল চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, এটি রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের অবহেলার আরও একটি উদাহরণ ৷ অতীতে, সেচ প্রকল্পগুলির জন্য, কেন্দ্র এবং রাজ্য 75-25 অনুপাতের সাথে ব্যয় ভাগ করত ৷ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্রের অংশভাগ হ্রাস পেয়ে 50 শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৷ তবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ক্ষেত্রে কেন্দ্র তার 50 শতাংশ অংশের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়নি ৷
তবে, বর্তমানে ঘাটালের মাস্টার প্ল্যান অথৈ জলে ৷ গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলগুলি এই প্ল্যান হবে বলে মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলেন ৷ কিন্তু, সেই আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে ৷ কোনও দিক থেকেই কাজ এগোয়নি একটুও ৷ ঘাটালবাসীদের দুর্দশা রয়ে গেছে একই ৷ দ্বিতীয়বার সাংসদ হলে এই মাস্টারপ্ল্যান রূপায়ণ করে দেবেন কথা দিয়েছিলেন দেব (দীপক অধিকারী) ৷ কিন্তু, সে কাজের কিছুই এখনও হয়নি ৷ দেবের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ তাঁর PA সায়ন জানান, দাদা শুটিংয়ে ব্যস্ত ৷ ঘাটাল গেলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেবেন ৷ পরে, সাংসদকে অনেকবার পার্সোনাল হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলে তারও উত্তর পাওয়া যায়নি ৷
তবে, এবিষয়ে শুধু দেবকে দোষ দিতে নারাজ BJP নেত্রী ভারতী ঘোষ ৷ মুখ্যমন্ত্রীরও দোষ আছে বলেই মনে করছেন তিনি ৷ বলেন, "একা দেবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই ৷ কারণ দেব যে দল করে, সেই তৃণমূলের নেত্রী ক্ষমতায় আসার আগে আশ্বস্ত করে গিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ছ'মাসের মধ্যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করবেন ৷ কিন্তু, ক্ষমতায় আসার পর তিনি সব ভুলে গেছেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই দেব সেই দলের একজন সাংসদ ৷ তাই একই পথ অনুসরণ করছেন ৷" 2021-এ BJP ক্ষমতায় এলে এই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করা হবে বলে জানান তিনি ৷
এই প্ল্যান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়েছেন বর্তমান রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইঞা ৷ কংগ্রেসে থাকাকালীন সময় থেকে তাঁর এই লড়াই চলছে ৷ তবে তিনি বলেন, BJP সরকার চক্রান্ত করে রাজ্য সরকারকে এই কপালেশ্বরী ও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে টাকা দিচ্ছে না ৷ যা একে অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্কিত ৷ কপালেশ্বরী প্রোজেক্টের সাড়ে 600 কোটি টাকা ও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের 1200 কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার এক প্রকার বন্ধ করে রেখেছে ৷ বিধায়ক গীতা ভুঁইঞা এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিধানসভাতে ৷ আমরা আগামীদিনে এই মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামব, যতদিন না কেন্দ্র টাকা দেয় ৷