মেদিনীপুর, 16 জুন : জামাইদের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে ষষ্ঠী মন্দিরে পুজো দেন শাশুড়িরা ৷ সঙ্গে চারদিন ধরে চলে অনুষ্ঠান ৷ এটাই প্রথা কিন্তু এবারে বাদ সেধেছে করোনা । প্যানডেমিকের জন্য সমস্ত উৎসব-অনুষ্ঠান বাতিলের নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার । তাই মনও খারাপ শাশুড়িদের ৷
মেদিনীপুরের 14 নম্বর তেলিপাড়ায় একসময় বাচ্চা না হওয়ার মানত করার জন্য স্থাপিত করা হয় ষষ্ঠী মন্দিরের । 1334 বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মন্দির ৷ সেই থেকে এই মন্দিরে চলছে পুজো ৷ এখানে শাশুড়িরা প্রতিবছর জাঁকজমক করে জামাইদের সঙ্গে নিয়ে এসে পুজো দেন ৷ উদ্দেশ্য জামাইদের সুখ-শান্তি এবং দীর্ঘায়ু কামনা । এভাবে দীর্ঘ প্রায় 94 বছর ধরে চলে আসছে পুজো ৷ তবে এবছর করোনার জন্য তা বন্ধ ৷ তাই মন খারাপ শাশুড়ি মায়েদের ।
কথিত আছে, কোনও একসময় সত্যেশ্বর সাউ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । কোন এক দম্পতির বাচ্চা না হওয়াতেই মানত করে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা । এরপর বাচ্চা হওয়ার পর স্বপ্নপূরণে জাঁকজমক করে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ তারপরে লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয় জাগ্রত ষষ্ঠী মায়ের কাহিনি ৷ পরবর্তীকালে শাশুড়ি মায়েরা জামাইদের জন্য প্রতি বছর বিশেষ দিনটিতে পুজো দিতে আসেন । নানা রকম মিষ্টি, ফল, ফুল ও পঞ্চব্যঞ্জন সহকারে পুজো দেওয়া হয় ৷ সঙ্গে আসেন জামাইরা । পুজোর পর রাতে বাউল গানের আসর বসে ৷ পরের দিন অন্নকূটের ব্যবস্থা । এছাড়াও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় চারদিন ধরে চলে অনুষ্ঠান । পুজোর জন্য তোলা হয় চাঁদা । এলাকায় বাড়ি বাড়ি চাঁদাও সংগ্রহ করেন শাশুড়িরা । তবে এবছর সে সবই বন্ধ ৷
কৃষ্ণ পাল, সুমিত্রা সাউরা বলেন, "বছরের এই একটি দিনে আমরা এই মন্দিরে উপস্থিত হই ৷ জাঁকজমক করে পুজো দিই জামাইয়ের জন্য ৷ যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই সুখে শান্তিতে থাকে ৷ এবং নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান হয়ে ভরে যায় সংসার । শুধু আমরা পুজো দিই তা নয়, সঙ্গে জামাই এবং নাতি-নাতনি, মেয়েও থাকে ৷ কিন্তু এবারে কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের মন খারাপ । পুজো দিতে পারছি না এবং কোনও অনুষ্ঠান করতে পারছি না । আমাদের সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার পুজো করব ৷"