চন্দ্রকোনা, 9 নভেম্বর : কথিত আছে, এক সময় রাজা হরিভানের স্ত্রী লক্ষ্মণাবতী মিত্রসেনপুরে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করে ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করতেন । টিনের ছাউনির ছোট্ট মন্দিরে মাটির তৈরি 14 ফুট উচ্চতার কালীপুজো আজও হয় মহা ধুমধাম করে ।
রাজা নেই, রাজত্বও নেই । রয়েছে রাজার মায়ের প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দির । ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছর সেই মন্দিরে পুজো করছেন এলাকার বাসিন্দারা । প্রায় চারশো বছরের এই পুজো রাজার মায়ের কালীপুজো নামে পরিচিত চন্দ্রকোনাজুড়ে । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের মিত্রসেনপুর এলাকায় রাজার মায়ের কালীপুজো হয় মহা ধুমধাম করে । মিত্রসেনপুর এলাকার মানুষ কমিটি গঠন করে রাজার আমলের প্রতিষ্ঠিত এই কালী মন্দিরে পুজোর আয়োজন করে । রাজার আমলে কালীপুজোয় ছাগল বলি হত । এখনও বলি প্রথা চালু রয়েছে । এছাড়াও অনেকে মানত করে পুজোর দিন ছাগল বলি দিতে আসেন । সেই মাংস রান্না করে ভোজের আয়জন হয় । কিন্তু এবছর কোরোনার জেরে তা বন্ধ থাকছে ।
অমাবস্যা তিথিতে কালীপুজো শুরু হয় । মূর্তি 11 দিন মন্দিরে থাকে । অর্থাৎ কালীপুজোর দিন থেকে পরের অমাবস্যার আগে 12 দিনের মাথায় নিরঞ্জন হয় । রাজার মায়ের কালী চতুর্ভুজা । কথিত আছে, 1617 সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন চন্দ্রকোনার রাজা হরিভান । কিন্তু মুঘলদের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে আত্মসমর্পণ করেন এবং রাজা উপাধি পেয়েছিলেন । বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারের কন্যা লক্ষ্মণাবতী চন্দ্রকোনার রাজা হরিভানের পত্নী ছিলেন । হরিভানের পুত্র রাজা মিত্রসেন এই মিত্রসেনপুর জনপদ তৈরি করেছিলেন । রাজা হরিভানের পত্নী লক্ষ্মণাবতী মিত্রসেনপুরে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করতেন । বর্তমানে সেই পুজোর আয়োজন করেন মিত্রসেনপুর অধিবাসীরা । আর কয়েকদিন পর কালীপুজো । রাজার মায়ের কালীপুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে ।
পুজো উদ্যোক্তা লোকেশ বসু বলেন, "আমাদের রাজার আমলে রীতিনীতি মেনে কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয় । পুজোয় রাজার আমলে যে বলি প্রথা ছিল তা আজও চলে আসছে । আমরা 5 টাকা, 10 টাকা করে চাঁদা তুলে পুজো করি ।" কিন্তু এবার কোরোনা সংক্রমণের জন্য কালীপুজোর সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ থাকছে ।
400 বছর ধরে পুজো হচ্ছে মিত্রসেনপুরের কালী মন্দিরে ইতিহাসবিদ তারাপদ বিশুই বলেন, "রাজার ছেলের নামে এই জায়গার নাম হয়েছে মিত্রসেনপুর । পরবর্তীকালে রানির হাত ধরে যে পুজো হত সেই পুজো এখনও চলে আসছে । আগে জমিদারি থেকে পুজোর জন্য অর্থ সাহায্য আসত । সেসব এখন বন্ধ । এই পুজো সর্বজনীন পুজো হয়ে উঠেছে ।"