মেদিনীপুর, 26 অক্টোবর: ফায়জানের মৃত্যুর ঘটনায় নয়া মোড় । এবার পড়ুয়াদের কাছে আর্তির পাশাপাশি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের (Autopsy Report) দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হতে চলেছে পরিবার । এমনটাই জানালেন আইনজীবী অনিরুদ্ধ মিত্র ৷ তিনি বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এত দেরি হচ্ছে কেন, তা নিয়েও আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছি ।"
প্রসঙ্গত, গত 14 অক্টোবর আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) লালা লাজপত রায় হল ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর তেইশের ফায়জান আহমেদের (Faizan Ahmed) পচাগলা দেহ । এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এই বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । খবর পেতেই সুদুর অসম থেকে ছেলের দেহ নিতে এসে খুনের অভিযোগে সরব হন ছাত্রের বাবা মা-সহ পরিবার । অভিযোগ দায়েরের সঙ্গে ছেলের দেহ শনাক্তকরণে ডিএনএ (DNA) পরীক্ষার আর্জি জানান বাবা সেলিম আহমেদ (IIT Kharagpur Student Death)।
এই ঘটনায় লাগে রাজনৈতিক রং। গেটের বাইরে আইআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল তৃণমূল । এমনকী বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের উস্কানিতেই এই খুন বলে দাবি করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমুলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি ।
এরপরে গত বৃহস্পতিবার খড়্গপুর টাউন থানা ও আইআইটিতে পৌঁছেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে ফায়জানের পরিবার । এই পরিবারের সঙ্গে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অনিরুদ্ধ মিত্র । তাঁরা এদিন পুলিশের সঙ্গে কথা বলে খুনের তদন্তের বিস্তারিত জানতে চেয়ে খড়্গপুর টাউন থানায় হাজির হয় । খড়্গপুর টাউন থানায় দাঁড়িয়েই মৃতের মা রেহানা আহমেদ আইআইটির পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সতর্ক করে হাতজোড় করে আর্জি করে বলেছিলেন, "আর ঘুমিয়ে থাকবেন না, আপনারা জেগে উঠুন ৷ অভিভাবকদের বলছি ছেলে-মেয়েকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকবেন না। এই খড়্গপুর আইআইটি (IIT) নিরাপদ নয় ।"
যদিও এই ঘটনায় ফায়জানের আইনজীবী অনিরুদ্ধ মিত্র বলেন, "এটা পুরোপুরি মার্ডার কেস । এত বড় ঘটনা কিন্তু পুলিশ এটাকে ছোট করে দেখছে এখানে । এই ঘটনায় যেমন আইআইটি কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি রয়েছে তেমনই এই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে দেরি করে গাফিলতি করছে রাজ্য পুলিশ । এই ধরনের একটা এত বড় ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্তে এত দেরি করছে কেন ? কেনই বা 14 তারিখ দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর রিপোর্ট দিতে এত দেরি হচ্ছে ৷ সেই নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি । অসমের মুখ্যমন্ত্রী এতবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে সঠিকভাবে নজর দিচ্ছেন না ৷ সেটা প্রশ্নের মুখে । আমরা হাইকোর্টের দারস্থ হব এবং অভিযোগ করব (IIT Kharagpur Student family to approach High Court) ।"
এই ঘটনায় ফায়জানের মেসো রশিদ আহমেদ বলেন, "আমরা আইআইটির গাফিলতির অভিযোগ যেমন তুলেছি তেমনই আমরা হাইকোর্টেও দ্বারস্থ হব । আমরা আগেই দাবি করেছি আমাদের ছেলেকে খুন করা হয়েছে । তবে কেন তিনদিন ধরে আমাদের ছেলের দেহ একটা ঘরে পড়ে থাকল, সে নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলেছি । তবে আমরা আমাদের আইনজীবীকে নিয়েই হাইকোর্টে দ্বারস্থ হব ।"
উল্লেখ্য, ফায়জান আহমেদের মৃত্যু কীভাবে এবং কেন ঘটল, সেই প্রশ্ন তোলেন আইআইটি-এর বাকি পড়ুয়ারা ৷ এ নিয়ে একটি প্রকাশ্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ৷ সেই মঞ্চে ডিরেক্টর ভি কে তিওয়ারির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন পড়ুয়ারা ৷ ফায়জানের মৃত্যুতে বুকে কালো ফিতে আটকে শোক প্রকাশ করেন তাঁরা ৷ শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই প্রকাশ্য আলোচনা সভা চলে শনিবার সকাল পর্যন্ত ৷
আরও পড়ুন:ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ফুঁসছেন পড়ুয়ারা, ক্ষোভ প্রশমনে মরিয়া আইআইটি খড়্গপুর
রবিবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পড়ুয়াদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি নিয়ে এই আলোচনা সভায় কথা হয়েছে ৷ পড়ুয়াদের আশংকা, এই ধরনের ঘটনা অবসাদের কারণে হতে পারে ৷ তাঁরা চান, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করুক আইআইটি কর্তৃপক্ষ ৷