গড়বেতা, 2 জুন : দেশজুড়ে কাশ্মীরি আপেল স্বাদে যেমন সুস্বাদু, তেমন দেখতেও সুন্দর, লাল টুকটুকে । সেই লাল আপেলের পাশাপাশি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সবুজ আপেল এবার রাজ্যে । সুদূর ইজ়রায়েল ও আমেরিকায় যার মূল চাষ হয় । এবার সেই সবুজ আপেল ফলছে খোদ বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুরে । শীতপ্রধান দেশের এই ফল এখন ফলবে গ্রীষ্মকালেও ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই চাষি দুর্গাদাস ও রাজেশ সবুজ আপেল চাষের বিষয়ে বলেন, "আমাদের দেশের কয়েকটি জায়গায় আপেল চাষ হয় । সেখান থেকে আপেল আমাদের জেলাতে আমদানি হয় । তবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতাতে পরীক্ষামূলক চাষের জন্য দুটি করে আপেল গাছ লাগানো হয়েছে এই প্রথম । তাও আবার ইজ়রায়েলি ও আমেরিকান সবুজে আপেল । শুধু শীতপ্রধান এলাকায় নয়, গ্রীষ্মকালেও ফলবে এই আপেল ।"
আরও জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা সফল হয়েছি । গাছে মুকুল ও ফল দুই-ই এসেছে । তবে এবার লক্ষ্য সার কীটনাশকের দিকে । যা এই সবুজ আপেলের ফলন, পরিচর্যা ও পুষ্টিগুণে সহায়তা করবে ।
আমদানির পরিবর্তে আপেল উৎপাদনে নজর দিতে চলেছেন বেশ কিছু চাষি । সবুজ আপেল চাষে উদ্যোগী হয়েছেন গড়বেতার দু'জন ফল চাষি । বাড়িতেই লাগিয়েছেন আপেল চারা । পরিচর্যাও শুরু করেছেন আপেল ফলনের । গড়বেতার ল্যাটেরাইট মাটিতেই ইতিমধ্যে গাছে মুকুল ধরেছে । হয়েছে থোকায় থোকায় আপেল ।
গড়বেতার মৌলাড়া গ্রামের তেলিজাত মৌজার উপর পরীক্ষামূলকভাবে দুটি আপেল গাছ লাগিয়েছেন দুর্গাদাস । সেই গাছে 20টি আপেল ধরেছে । যা দেখে উৎসাহিত ব্লক কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরাও । অপরদিকে বাসডিহা গ্রামের রাজেশ নন্দীও দুটি আপেল গাছ লাগিয়েছেন । মুকুল ধরেছে গাছে । বেজায় খুশি দুর্গাদাস ও রাজেশ ।
গড়বেতায় সবুজ আপেলের পরীক্ষামূলক চাষ... প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের সিমলা ও কাশ্মীর আপেলের যোগান দিয়ে থাকে । আপেল সাধারণত শীতকালীন ফল হিসাবে আমরা জেনেছি । যাতে সারা বছর এই আপেল পাওয়া যায় সেই কারণে দুর্গাদাসবাবু জানালেন, "বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনে আপেল চাষ করছি । প্রথমে চৌকো করে মাটি কেটে তার উপর জৈব সার মিশিয়ে আপেল ফলনের উপযুক্ত মাটি তৈরি করেছি । তারপর চারা রোপণ করেছি । এছাড়া, গাছে যাতে সরাসরি রোদ না লাগে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছি ।"
দুর্গাদাস ও রাজেশের আপেল চাষের প্রতি উৎসাহ দেখে গড়বেতা 1 নম্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক তুষার পাত্র জানান, "এগুলি এনাও গোল্ডেন ডোরসেট প্রজাতির আপেল । হিমাচল বা কাশ্মীরি আপেলের চারা নয় । সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির আপেলের চারা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা । এদের মধ্যে একটি ইজ়রায়েল ভ্যারাইটি এবং অপরটি আমেরিকান ভ্যারাইটি । কৃষি বিজ্ঞানীরা দুটি প্রজাতির মিলিত সংষ্করণে তৈরি করেছেন । এই আপেলের চারাগুলি কৃষি দপ্তর থেকে এনেছিলাম । পরিচর্যার জন্য সমস্ত রকম সহায়তা করেছিলাম । এখন আপেল ধরেছে । পরিণত আপেলগুলির রঙে ও স্বাদে কেমন হবে তা এবার দেখার পালা ।"
তুষার বাবুর মতে, রঙে-স্বাদে হিমাচল ও কাশ্মীরি আপেলের থেকে এই আপেল যদি ভিন্ন ও সুস্বাদু হয়, তবে কাজু বাদাম ও আমের পাশাপাশি সবুজে আপেল চাষে নতুন দিশা দেখবে জেলা চাষিরা ।