চন্দ্রকোণা, 22 সেপ্টেম্বর : নানা আকারের চাঁদমালা থেকে প্রতিমার গয়না ৷ বংশ পরম্পরায় এসবই তৈরি করে আসছেন চন্দ্রকোণার মালাকাররা ৷ একসময় শুধুমাত্র এই কাজ করেই সংসার চলত তাঁদের ৷ বিশেষ করে দুর্গাপুজোর সময় দম ফেলার ফুরসৎ পেতেন না শিল্পীরা ৷ কিন্তু, সময়ের ফেরে কদর কমেছে এখানকার শোলা শিল্পের ৷ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা ৷ এখন মূলত পরিবারের মহিলারাই বেশিরভাগ শোলার কাজ করেন ৷ পুরুষরা মাঝেমধ্যে তাতে সাহায্য করলেও রোজগারের অন্য সন্ধানও করতে হয় তাঁদের ৷
আরও পড়ুন :Durga Puja : 150 বছরের পটের দুর্গায় আধুনিকতার ছোঁয়া, ভোগ নিবেদনে মাছের ঝোল
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা-1 ব্লকের মনোহরপুর-2 গ্রাম পঞ্চায়েতের কূলদহ ও ডিঙ্গাল গ্রাম মিলিয়ে 15 থেকে 20 টি মালাকার পরিবারের বাস ৷ তবে এখন আর তাঁদের সবাই শোলার কাজ করেন না ৷ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মেরেকেটে আট থেকে 10 টি পরিবারের সদস্যরা ৷ তাঁদের আক্ষেপ, এখন আর আগের মতো শোলার গয়নার চাহিদা নেই ৷ ফলে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে ৷ শোলার সামগ্রী তৈরি বা বিক্রি করে তাই সংসার টানা দায় ৷
তবে চাহিদা কমলেও কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৷ তাই উৎপাদন খরচও বেড়েছে অনেকটাই ৷ তাছাড়া, এই কাজ অত্যন্ত পরিশ্রমের ৷ এক-একটা গয়না তৈরি করতে সময়ও লাগে অনেকটা ৷ বদলে দাম যা পাওয়া যায়, তাতে কোনও মতে পণ্য তৈরি খরচটুকু ওঠে ৷ স্থানীয় শিল্পীরা জানিয়েছেন, শোলার গয়না তৈরি করতে শোলা ছাড়াও আরও অনেক উপকরণ কিনতে হয় ৷ চাঁদমালা, মুকুট, মালা, হাতের গয়না প্রভৃতি তৈরি করেতে ভেলবেট, চুমকি, প্লাস্টিকের ফুল, রং-সহ আরও নানা সামগ্রী কিনতে হয় ৷ আগে এক বান্ডিল শোলার দাম ছিল 150 টাকা ৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে 350 টাকা ৷ পাশাপাশি, অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু সেই তুলনায় মালাকারদের হাতে তৈরি সামগ্রীর দর বাড়েনি ৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা ৷
শোলা শিল্পে মন্দা, পুজোর মরশুমেও রোজগারে টান চন্দ্রকোণার মালাকারদের আরও পড়ুন :Mahalaya: আশ্বিনের শারদপ্রাতে টিভির পর্দায় কোয়েল-শুভশ্রী-দিতিপ্রিয়া
অতিমারি পরিস্থিতি সমস্যা আরও বাড়িয়েছে ৷ আগে দুর্গাপুজোর সময়েই সবথেকে বেশি কাজ পেতেন মালাকাররা ৷ কিন্তু, করোনা আবহে পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের ৷ আর তাতেই কপাল পুড়েছে মালাকারদের ৷ বরাত যেটুকু মিলেছে, তাতে রোজগার হবে নামমাত্র ৷ এই পরিস্থিতিতে মালাকার পরিবারের এখনকার প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে বিকল্প রোজগারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে ৷ আর যাঁরা এখনও শোলার গয়না তৈরি করে চলেছেন, তাঁদের দাবি, পাশে দাঁড়াক সরকার ৷ ধুঁকতে থাকা হস্তশিল্পকে বাঁচাতে নেওয়া হোক ব্যবস্থা ৷ তাহলে তাঁদের পুজোটাও একটু ভালো কাটে ৷