কেশপুর, 2 ডিসেম্বর :ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগের (Fake Rape Charge) দায় বয়ে বেড়াতে হয়েছে পাঁচবছর ! বয়ে বেড়াতে হয়েছে অন্যের সন্তানের পিতৃত্ব পালনের জবরদস্তির দায়িত্বও ! পাঁচবছর পর অবশেষে প্রমাণিত হয়েছে তিনি নির্দোষ ! তিনি কোনও দিনই কোনও নাবালিকাকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেননি ৷ কোনও নাবালিকাকে ধর্ষণও করেননি তিনি ৷ কিন্তু, এত কিছুর পরও লড়াই জারি রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) কেশপুরের (Keshpur) বাসিন্দা এক যুবকের ৷ কারণ, পাঁচ বছর আগে যে নাবালিকা তাঁর বিরুদ্ধে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগ তুলেছিল, আজ তিনি 18 বছরের তরুণী ৷ তাঁর মিথ্যা অভিযোগ সামনে আসার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করলেও জামিনে মুক্ত রয়েছেন অভিযুক্ত ৷ অথচ আজও নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁর 'ধর্ষক' স্বামীকে !
ঘটনার সূত্রপাত হয় 2017 সালে ৷ কেশপুরের আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা 13 বছরের এক কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে ৷ এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় প্রতিবেশী, বছর বাইশের এক যুবককে ৷ বলা হয়, ওই যুবকই বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে সহবাস করেছেন ! আর সেই কারণেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ওই কিশোরী ৷ এই অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেন অভিযুক্ত যুবক ৷ কিন্তু, গ্রামের মোড়লদের চাপে তাঁকে ওই নাবালিকাকেই বিয়ে করতে হয় ৷ এরপরই বাড়ি ছাড়েন যুবক ৷ মেদিনীপুর আদালতে মামলা রুজু করেন তাঁর নাবালিকা স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে ৷ অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন নাবালিকা ৷
আরও পড়ুন: ফের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক মৃত্যু, দুর্ঘটনায় ছিন্নভিন্ন দেহ
সেই মামলা এখনও চলছে ৷ তারই প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দেয়, কিশোরী মায়ের সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা (DNA Test) করাতে হবে ৷ সম্প্রতি সেই পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে ৷ তাতে জানা যায়, কিশোরী অবস্থায় যে মেয়ের জন্ম দিয়েছিল অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রী, সেই মোটেও ওই যুবকের সন্তান নয় ! এরপরই গত 4 অগস্ট মেদিনীপুর আদালত যুবকের স্ত্রী ও তাঁর মাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় ৷ কিন্তু, তারপরও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ ৷ ফলে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হন যুবক ৷ ইতিমধ্যে চলতি বছরই যুবকের স্ত্রীর বয়স 18 বছর পূর্ণ হয় ৷ আদালত আবারও যুবকের স্ত্রীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় ৷ সেইসঙ্গে, যুবকের স্ত্রীর সন্তানের আসল বাবা কে, তাঁকেও খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ শেষমেশ গত বুধবার ওই তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ কিন্তু, আপাতত তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন বলে দাবি সূত্রের ৷
ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে নিগৃহীত যুবকের আইনজীবী শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে ওই তরুণী নাবালিকা থাকাকালীনই আমার মক্কেলের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন ৷ আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে ৷ কিন্তু, একাধিক কারণে আদালত তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে ৷ তবে, এই ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে আনন্দপুর থানার পুলিশ একাধিক গাফিলতি করেছে ৷ যে কারণে ওই কন্যা সন্তানের আসল বাবা এখনও সামনে আসেননি ৷ তাছাড়া, কার পরামর্শে আমার মক্কেলকে এভাবে ফাঁসানো হয়েছিল, সেটাও এখনও স্পষ্ট হয়নি ৷ ঘটনার সঠিক তদন্ত হলেই সব সত্যি সামনে আসবে ৷"
এদিকে, এই ঘটনার সঙ্গে ইতিমধ্যেই নাম জড়িয়েছে এলাকার এক দাপুটে তৃণমূল নেতার ৷ তিনি কেশপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বুথ সভাপতি সঞ্জয় পান ৷ আক্রান্ত যুবকের দাবি, সঞ্জয় তাঁর স্ত্রীর আত্মীয় ৷ পাঁচ বছর আগে সঞ্জয়ের মদতেই সালিশি সভা বসিয়ে তাঁকে ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন যুবক ৷ যদিও সঞ্জয় নিজে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন ৷ ওই যুবকের সঙ্গে বিজেপির গোপন সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি ৷