পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

চলছে না ট্রেন, রুটি-রুজি হারিয়ে সমস্যায় মেদিনীপুর স্টেশনের হকাররা

জেলার প্রায় প্রায় 20 হাজার হকারের পেট চলে রেল পরিষেবার উপর নির্ভর করে । লকডাউনে চরম আর্থিক সমস্যায় তাঁরা । তাঁদের অভিযোগ, সরকারের তরফেও তেমন কোনও সাহায্য মেলেনি ।

মেদিনীপুর স্টেশনের হকাররা
মেদিনীপুর স্টেশনের হকাররা

By

Published : Jun 25, 2020, 6:20 PM IST

Updated : Jul 24, 2020, 7:45 PM IST

মেদিনীপুর, 9 জুন : রেলের চাকা ঘুরলে তাঁদের পেট চলে । ট্রেনে ভিড় বাড়লে তাঁদের মুখে হাসি ফোটে । রোজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে খাবার সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস বিক্রি করেন তাঁরা । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ আর লকডাউনে চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন মেদিনীপুর স্টেশনের হকাররা ।

মেদিনীপুর স্টেশনের রেল পরিষেবার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে হকারদের জীবন । ভোরবেলা থেকে চা,চপ মুড়ি থেকে শুরু করে ওষুধ, রুমাল, ব্রাশ সহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে রোজ বেরিয়ে পড়েন তাঁরা । দূরপাল্লার ট্রেনে খুব একটা সুযোগ থাকে না । মূলত, লোকাল ট্রেনেই এক স্টেশন থেকে অন্যত্র যাতায়াত করে জিনিসপত্র বিক্রি করেন । এভাবেই বছরের পর বছর চলছে । বর্তমানে রেল পরিষেবার উপর নির্ভর করে জেলার প্রায় 20 হাজার হকারের দিন গুজরান হয় । কিন্তু, কোরোনা সংক্রমণ আর লকডাউন তাঁদের রুটি-রুজি কেড়েছে । দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ রেল পরিষেবা । আনলক ওয়ানে শর্তসাপেক্ষে লকডাউন জারি হলেও, ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি । এর জেরে চরম সমস্যায় পড়েছেন হকাররা । প্রথমের দিকে জমানো টাকায় দিন কাটলেও, এখন সেটাও ফুরিয়েছে । এমনই জানাচ্ছেন স্টেশন চত্বরের কয়েকজন হকার । এদিকে ভরা সংসার । বৃদ্ধ বাবা মা । কীভাবে সব চলবে, তা ভেবেই দিন কেটে যাচ্ছে তাঁদের ।

লকডাউনে সমস্যায় রেল হকাররা

ট্রেনে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন দিলীপকুমার মণ্ডল । তিনি বলেন, "ছোটোবেলা থেকে হকারি করছি । এই ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয়, তাতে আমার পরিবার চলে । বৃদ্ধ বাবা-মাও রয়েছে । কিন্তু দীর্ঘদিন লকডাউনে রেল পরিষেবা বন্ধ । আমাদের আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে । সংসার কীভাবে চলবে ? সেই চিন্তাতেই রাতে ঘুম আসে না । মাঝে মাঝে দু'একটি সংস্থা দুমুঠো চাল-ডাল দিয়ে যায় । কিন্তু ছেলে মেয়েদের কিছু হয়ে গেলে, তাদের চিকিৎসা করব কীভাবে?" ট্রেনে চা বিক্রি করেন রাজকুমার পাত্র । তিনি বলেন, "বাবা করতেন এই হকারি । আমিও করছি । আজ প্রায় 60-70 দিন সব বন্ধ । প্রথম প্রথম জমানো টাকায় চলছিল । কিন্তু, এখন সেই টাকাও ফুরিয়েছে । টাকা কোথা থেকে পাব, সেই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে । সরকার যদি কিছু সাহায্য করে, তাহলে ভালো হত । কবে আবার ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তার অপেক্ষায় রয়েছি ।" একই অবস্থা সুন্দরলাল পাত্র, রতন পাত্রদের ।

রুটি-রুজি হারিয়ে সমস্যায় মেদিনীপুর স্টেশনের হকাররা

এবিষয়ে হকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেল হকার্স ইউনিয়ন । রেল হকার্স ইউনিয়নের নেতা ফ্রান্সিস পিটার বলেন, "আমাদের এই সাউথ ইস্টার্ন জ়োনে প্রায় 20 হাজার হকার রয়েছে । ট্রেন পরিষেবার উপর নির্ভর করেই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে খাবার, নিত্যপ্রয়োজনাীয় জিনিসপত্র বিক্রি করেন তাঁরা । যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই সংসার চলে । কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে সব বন্ধ । আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু দফায় লকডাউন চলছে । ট্রেন চলাচল এখনও শুরু হয়নি । তাই এই সাহায্যও পর্যাপ্ত নয় । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনেক প্রকল্প আসছে । কিন্তু তা থেকে এখনও কোনও লাভ মেলেনি । লোন দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু তার বিনিময়ে কিছু রাখতে বলছে ব্যাঙ্ক । আমাদের তো কিছুই নেই । কী রাখব ব্যাঙ্কের কাছে । আশঙ্কায় দিন কাটছে । এবিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে লিখিতভাব জানানো হয়েছে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি ।"

আপাতত, পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় হকাররা । কবে ট্রেনের চাকা ঘুরবে আর সবকিছু আগের মতো শুরু হবে ।

Last Updated : Jul 24, 2020, 7:45 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details