দিওয়ালি পুতুল তৈরিতে ব্যস্ত মেদিনীপুরের কুমোরপাড়া মেদিনীপুর, 30 অক্টোবর: দোড়গড়ায় কালীপুজো ও দিওয়ালি ৷ কদিন পরেই আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠবে চারিদিক ৷ পুজোতে মেতে উঠবে বাঙালি-সহ বাংলার মানুষজন । এই আনন্দ উৎসবে অন্যতম আকর্ষণ হল জঙ্গলমহলের কারিগরদের হাতে গড়া মাটির দিওয়ালি পুতুল । তবে এবারে প্রদীপ থেকে পুতুল গড়া কঠিন হয়ে পড়ছে কারিগরদের ৷ এর মূল কারণ মাটি, খড় এবং জ্বালানির পাশাপাশি রংয়ের দাম বৃদ্ধি । তার জন্য পুতুলের দাম এক টাকা করে বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা । তবে আর্থিক সংকটের মধ্যেও পূর্বপুরুষ থেকে চলে আসা পেশাকে ছাড়তে নারাজ কারিগররা ৷ সেই টানেই দিওয়ালি পুতুল বানিয়ে চলেছেন এইসব শিল্পীরা ।
দিওয়ালি পুতিল তৈরিতে হাত লাগিয়েছে খুদেরা ব্যবসায়ী সরস্বতী বেরা বলেন, "পূর্বপুরুষ ধরে আমরা এই কাজ করে আসছি ৷ আজও আমরা পেশা এবং নেশার টানে এই পুতুল গড়ে চলেছি । যদিও এবারের রংয়ের দাম প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে । তবু আমরা সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে চেষ্টা করছি লাভের মুখ দেখার ।" রাজকুমার বেরা বলেন, "সমস্যা তো অনেক রয়েছে । তাছাড়া মানুষ দিওয়ালি পুতুল কিনছে না তাদের হাতে টাকার জোগান কম বলে । এইসব থাকা সত্ত্বেও আমরা দিওয়ালি পুতুল করে থাকি, যাতে সারা বছর সংসার চালানো যায় । এই পুতুল করার কাজে হাত লাগিয়েছে পরিবারের কচিকাঁচারাও ।"
প্রথমে আগুনে পোড়ানো হয় পুতুলগুলি মূলত এখানকার স্থানীয় মানুষজন এই কালীপুজো উপলক্ষে নিজেদের বাড়িতে মাটির দিওয়ালি ঘর বানায় । মাটির দিওয়ালি ঘরে এই পুতুলে আলো জ্বেলে সকলে মাতেন উৎসবে । এই পুতুলের সঙ্গে মাটির সরা করে দেওয়া হয় নানারকম প্রসাদ, ধূপধুনো এবং নৈবেদ্য । দিওয়ালি পুতুল প্রথমে আগুনে পুড়িয়ে তারপর রং করতে হয় ৷ আবহাওয়া সাধ দেওয়ায় পুতুল থেকে প্রদীপে রংয়ের কাজে নেমে পড়েছেন কারিগররা । এরই সঙ্গে চলছে তার উপর আঁকিবুকি আঁকার কাজ । আর এই দিওয়ালি পুতুল প্রস্তুতে হাত লাগিয়েছে বড় থেকে বাড়ির ছোটরাও । বর্ষা বেরা জানায়, পড়ার পাশাপাশি খালি সময়ে এই পুতুল গড়ে সে । পরিবারের সঙ্গে থাকতে পেরে এবং এই রঙের আঁকি-বুকি কাজ করতে পেরে তার খুব ভালো লাগে ।
তারপর রং করে শুকিয়ে নেওয়ার পালা আরও পড়ুন:মূর্তি কেনায় বিমুখ ক্রেতারা, লক্ষ্মীলাভে ধন্ধে পটুয়া পাড়ার মৃৎ শিল্পীরা
দিওয়ালি এবং কালীপুজা উপলক্ষে এ বছর কুমারপাড়ার বেরা পরিবার হাজার খানেক পুতুল তৈরি করেছে । যা ইতিমধ্যেই তাদের হাত ধরে পাড়ি দিতে চলেছে জেলার ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে । বড় বড় হোলসেলারের পাশাপাশি ছোট ছোট ক্রেতারা সেই দিওয়ালি পুতুল কিনে নিয়ে যাবে নিজেদের বাড়িতে । এই দেওয়ালি পুতুলের মধ্যে রয়েছে এক প্রদীপ,দু প্রদীপ,চার প্রদীপ-সহ প্রায় 25 রকমের প্রদীপ তৈরি হয় এখানে । অন্যদিকে এক, দুই-সহ 10 হাতার দিওয়ালি পুতুলও রয়েছে কারিগরদের কাছে । এরই সঙ্গে এ বছর প্রায় দু'ফুটের বড় দিওয়ালি পুতুল তৈরি করছেন তাঁরা । এখন শুধু অপেক্ষা দিওয়ালি ও কালীপুজোর ।