শিক্ষকদের গাফিলতিতে জলে ডুবে মৃত্যু ছাত্রের! দাসপুর, 14 সেপ্টেম্বর: স্কুলে ফুটবল খেলার পরে পাশের পুকুরে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের। বুধবার রাত নাগাদ পুকুর থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওই মৃতদেহ আটকে রেখে শিক্ষকদের স্কুলের ভিতরে মারধর করার অভিযোগ ওঠে ৷ তুমুল বিক্ষোভ স্কুল চত্বরে, ঘটনাস্থলে গতকাল রাতেই পৌঁছয় পুলিশ। তবে মধ্যরাতে শিক্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন হাইস্কুলের ৷
ঘটনাক্রমে জানা যায়, বুধবার স্কুল ছুটির পর দাসপুর থানার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন হাই স্কুলের তরফ থেকে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেই ফুটবল খেলার শেষে ছাত্ররা স্কুল লাগোয়া পুকুরে স্নান করতে নামে। তারপর আর উঠে আসেনি ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র ৷ ছাত্রের বাবা ও এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, সন্ধ্যা নাগাদ ছেলে বাড়ি না-ফেরায় তাঁরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। স্কুলের সামনে এসে দেখে শিক্ষকরা সকলেই বাড়ি চলে গিয়েছে।
স্কুলের গেটের বাইরে ওই ছাত্রের ব্যাগ পড়ে রয়েছে ৷ স্কুল গেটে তালা ঝুলছে। তারপরে খোঁজাখুঁজির পর রাত নাগাদ স্কুল লাগোয়া পুকুর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃত ছাত্রের পরিবার-সহ গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে স্কুলে পৌঁছয় শিক্ষকরা। উত্তেজিত জনতা শিক্ষকদের উপর তেড়ে যায় এবং বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, শিক্ষকদেরকে মারধর করে আটকে রাখা হয়, ছাত্রের মৃতদেহ ফেলে রেখে। সকলের দাবি, শিক্ষকদের চরম গাফিলতির ফলেই একটি তরতাজা প্রাণ চলে গেল।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নীশ্বর চৌধুরী-সহ দাসপুর থানার পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের আলোচনার চলে। অবশেষে পুলিশের আশ্বাসে ছাত্রের মৃতদেহ স্কুল থেকে বের করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। তারপরেও স্কুলের ভিতরে শিক্ষকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রের পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের শিক্ষকদের অবহেলার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা ঘটনার বিহিত চাই।
সরস্বতী চক্রবর্তী (এক অভিভাবক) বলেন, "একটা তরতাজা প্রাণ এভাবে জলে ডুবে মৃত্যু ঘটে গেল ৷ অথচ মাস্টারমশাইরা স্কুলে তালা লাগিয়ে বাড়ি চলে গেলেন ৷ মাস্টারমশাইদের পেটে শিক্ষা নেই তাই এই ধরনের নিকৃষ্টতর ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এর একটা বিহিত চাই।" খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামপ্রসাদ সামন্ত বলেন, "স্কুলের ফাইনাল খেলায় সকল ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেছিল। এরপর খেলা শেষ হতেই আমরাও ছাত্রদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু তারপরে এরকম একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খবর পাই এবং স্কুলে আসি। যদিও কী কারণে ঘটনা ঘটল, কার গাফিলতি ছিল যতক্ষণ না-খতিয়ে দেখে আলোচনা করা হবে ততক্ষণ বলা যাবে না। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখব। এরপর রাত 11টা নাগাদ পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে স্কুলের ভিতর থেকে শিক্ষকদের এসকোর্ট করে বের করা হয়।
আরও পড়ুন:ছাত্রমৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে অ্যান্টি র্যাগিং কর্মসূচি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে