কর্ণগড়, 15 ডিসেম্বর : পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছে অনেক ইতিহাস বিজড়িত স্থান ৷ তার মধ্যে অন্যতম হল কর্ণগড় ৷ কর্ণ রাজার রাজত্বের জন্যই এই এলাকার নাম কর্ণগড় ৷ ইতিহাস সমৃদ্ধ হলেও ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ৷ পোড়ো এই জায়গা বরাবর নির্জন ছিল বলেই দাবি বাসিন্দাদের ৷ দিনের বেলাতেও এখানে আসতেন না কেউ ৷ পাশাপাশি লোকালয় থেকে অনেকটাই দূরে হওয়ায় নানা অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছিল এই স্থান ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় কর্ণরাজার রাজত্বের ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে প্রায় 2 কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠেছে নয়া পর্যটন কেন্দ্র (Tourist Spot in West Medinipur) ৷ অভিনেত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক জুন মালিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এই পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন ৷ সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া, শিউলি সাহা, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডঃ রেশমি কোমল ও পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার ৷
মেদিনীপুর শহরের অদূরে অবস্থিত কর্ণগড়ের ইতিহাস অতি প্রাচীন । কথিত আছে, রাজা ইন্দ্রকেতু এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে নরেন্দ্র কেতু মনোহরগড় স্থাপন করে সেখানে বসবাস শুরু করেন । রণবীর সিংহ নামে এক লোধা সর্দারকে রাজ্যশাসনের ভার দেন তিনি । কিন্তু অপুত্রক থাকায় রণবীর অভয়া নামে এক মাঝির ছেলেকে পোষ্যপুত্র করে তার হাতে রাজ্যশাসনের ভার অর্পণ করেন ।
আরও পড়ুন :কোপাই থেকে তিলপাড়া জলাধার, বীরভূমের অন্যতম পিকনিক স্পটের তালিকা
এর পরবর্তীকালে বংশপরম্পরায় এই রাজ্যশাসন চলতে থাকে ৷ কর্ণগড়ের যাবতীয় আকর্ষণ মহামায়া মন্দির ৷ এখানে মা মহামায়ার পাশাপাশি দণ্ডেশ্বরের বিগ্রহ ও উৎকল শিল্পরীতিতে তৈরী পঞ্চমুন্ডির আসন রয়েছে । সংরক্ষণের অভাবে অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে । চুয়াড় বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত রানি শিরোমণি গড়েরও এমন দশা হয়েছে ।
1755 খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় শেষ অপুত্রক রাজা অজিত সিংহের । তাঁর দুই রানি ছিলেন ভবানী ও শিরোমণি । রানি শিরোমণি ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ায় বন্দি করা হয় তাঁকে । পরে নাড়াজোলের রাজা আনন্দলাল খানের মধ্যস্থতায় চরম সাজা না হলেও তাকে আবাস গড়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয় ।
মেদিনীপুর শহরের উত্তর দিকে প্রায় 18 কিলোমিটার দূরে কর্ণ রাজবংশের রাজধানীর প্রমাণ পাওয়া যায় । যার প্রধান গড় ছিল কর্ণগড় । মেদিনীপুরের প্রায় 12 কিলোমিটার উত্তর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ব্যাস ধরে বিস্তৃত ছিল এই রাজধানী । জঙ্গলের ভিতর দিয়ে জলস্রোত নদীর আকার ধারণ করে যেখান দিয়ে বয়ে যেত সেটিই ছিল গড়ের অন্দরমহল । গড়ের দুই দিক দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়ে এক সঙ্গে মিলিত হত পারাং নদী । অনেকটা পরিখার মতো । গড়ের মধ্যেই ছিল কুল দেবতা ও অধিদেবতা দণ্ডেশ্বর এবং মা ভগবতী মহামায়া । তবে রানি শিরোমণির স্মরণে মেদিনীপুর শহরে গেস্ট হাউস ও ভারতীয় রেল আদ্রা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করলেও রাজা কর্ণের স্মরণে কোনও কিছুই চালু নেই ৷