মেদিনীপুর, 27 সেপ্টেম্বর : কোনও এক বিধবা মহিলার হাত ধরে সূচিত হয়েছিল মুখোপাধ্যায় পরিবারের অভয়া দুর্গাপুজো । এই দুর্গার যেমন অসুর নেই তেমনই নেই মায়ের দশ হাত ৷ এভাবেই অভয়া দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন বিগত 300 বছরেরও বেশি সময় ধরে ৷ পুজোয় রয়েছে নানাবিধ নিয়মাবলী । কাঁসাই নদীতে বিসর্জন হয় বেহারা সহযোগে ঢাক-ঘণ্টা বাজিয়ে ।
দুগ্গাঠাকুর মানেই দশ হাত ৷ সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিকের সঙ্গে থাকবে মহিষাসুরও ৷ তাকেই তো বধ করেন মা দুগ্গা ৷ এইভাবেই দুর্গা প্রতিমা দেখতে অভ্যস্ত আম বাঙালী ৷ তবে মেদিনীপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা প্রতিমাটি এই চিরাচরিত ধারা থেকে অনেকটা আলাদা ৷ এই বাড়ির দুর্গার দশ হাত নেই ৷ নেই অসুরও ৷ এখানে মা দুগ্গার বাহন হল সাদা সিংহ ৷ এছাড়াও লক্ষ্মীর পেঁচা বা সরস্বতীর হাঁসও নেই ৷ এই দুর্গার নাম হল অভয়া দুর্গা ৷ বিগত 300 বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে পূজিত হচ্ছেন দেবী ৷
সাড়ম্বরেই পুজো সারেন মুখোপাধ্যায় পরিবার ৷ পরিবারের কোনও এক বিধবা নারী এই পুজোর প্রচলন করেন । পরবর্তীকালে সেই পুজোই চালিয়ে আসেন তাঁর ভাসুর এবং শরিকরা। এরপর শরিক হিসাবে দায়িত্ব পান দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় । পরে তাঁর ছেলে রাম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরবর্তীকালে কৃষ্ণভাবিনীদেবী অর্থাৎ বর্তমান মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রাণপুরুষ এই পুজোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । তাঁর থেকেই অমরেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং বর্তমানে কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় এই পুজো করে আসছেন ৷
মহিষাসুরমর্দিনী যুদ্ধের পর দেবী দুর্গা স্বর্গে ফিরে যাচ্ছেন শান্তির বাণী নিয়ে ৷ সেই সময় দেবীর অভয়া রূপ ৷ মা দুর্গার সেই অভয় রূপেরই পুজো হয় মুখোপাধ্যায়দের বাড়িতে ৷ অসুরবিহীন এই দুর্গা প্রতিমার জন্য জন্মাষ্টমীর দিনে রুপোর থালা করে মাটি আনা হয় নদীর ধার থেকে । সেই মাটি দিয়েই প্রতিমা তৈরি হয় ৷ হৈমপুজো হয় ষষ্ঠীর দিন মায়ের মন্দিরে প্রবেশের মাধ্যমে । এরপর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে মায়ের পুজো হয় । দশমীতে ঘট বিসর্জন । ঢাক-ঘন্টা বাজিয়ে বেহারা সহযোগে প্রতিমা বিসর্জন করা হয় কাঁসাই নদীতে । সেই ঘণ্টার আওয়াজেই গোটা মেদিনীপুর শহর জানতে পারে মুখোপাধ্যায় পরিবারের ঠাকুর বিসর্জন হচ্ছে ৷