আসানসোল, 13 নভেম্বর:সেই অভিশপ্ত নভেম্বরের স্মৃতি ফিরল । ক্যালেন্ডারের পাতায় বহু বছর পেরোলেও স্মৃতির পাতায় মাত্র একদিনের ব্যবধান । 1989 সালের 13 নভেম্বর রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে দুর্ঘটনায় আটকে পড়েছিলেন 64 জন খনি শ্রমিক । গতকাল, 12 নভেম্বর উত্তরকাশীর যমুনোত্রী জাতীয় সড়কে নির্মীয়মাণ টানেল ভেঙে আটকে পড়েছেন অন্তত 40 জন শ্রমিক । মহাবীর খনি থেকে রোমহর্ষক ভাবে উদ্ধার করা গিয়েছিল 64 জন খনি শ্রমিককে । উত্তরকাশীর টানেল থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় শ্রমিকদের সেদিকে তাকিয়ে দেশ । উদ্বিগ্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও । স্মৃতির ঝাঁপিতে ডুব দিয়ে দেখে নেওয়া যাক, সে দিন কী ঘটেছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে ।
1989 সালের 13 নভেম্বর । রাতের শিফটে কাজ চলছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে । খনির 21 এবং 42 নম্বর সেকশনে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা । দুটি সেকশনে 61 জন এবং 10 জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন । আর তখনই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা । খনির ভিতরে কয়লা খোঁড়ার জন্য ডিনামাইট ব্লাস্ট করতেই হু হু করে জল ঢুকে যায় খনিতে । পরে জানা গিয়েছিল, মহাবীর খনির পাশেই ছিল ব্রিটিশ আমলের একটি খনি । পরিত্যক্ত সেই খনিতে প্রচুর জল মজুত ছিল । ডিনামাইট বিস্ফোরণের কারণে খনির দেওয়াল ভেঙে যায় । যার ফলে প্রায় 11 লক্ষ গ্যালন জল ঢুকে পড়ে মহাবীর খনিতে । 6 জন খনি শ্রমিক যাঁরা দেওয়ালের কাছে ছিলেন, তাঁরা জলের তোড়ে ভেসে যান । অনেক পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল । কয়েকজন খনিমুখের সামনাসামনি থাকায় তড়িঘড়ি উপরে উঠে যেতে পেরেছিলেন । কিন্তু খনির ভিতর আটকে পড়েন 65 জন শ্রমিক । ঠিক যেভাবে এখন টানেলের ভিতর 40 জন আটকে আছেন উত্তরকাশীতে ।
কীভাবে উদ্ধার হয়েছিলেন শ্রমিকরা ?
খনির শ্রমিকরাই খনি থেকে বের হয়ে জানিয়েছিলেন সেই বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা । ঘটনার পরে তাঁরা খনির ভিতরেই একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন । চারিদিকে জল । খনির ভিতরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ভাবেই চলে যায় । অন্ধকার খনিগর্ভে মৃত্যুভয় বুকে নিয়ে 65 জন । খনি শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন, এত অন্ধকার খনির ভেতরে যে নিজের আঙুলও দেখা যাচ্ছিল না । তবু ক্ষীণ আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল খনির ভিতর থাকা টেলিফোন লাইন । যা দিয়ে যোগাযোগ করা যায় শ্রমিকদের সঙ্গে । শ্রমিকরাও জানান, তাঁরা কোন অংশে আটকে আছেন । এরপরে শুরু হয় শ্রমিকদের বাঁচানোর লড়াই ।