আসানসোল, 13 ডিসেম্বর: জন্মের পর থেকে তিন বোনকে বাঁচানো নিয়ে কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল মা ও বাবাকে । নির্দিষ্ট সময়ের আগে এবং তিনজনের একসঙ্গে জন্ম হওয়ায় ওজন ও শারীরিক গঠন-সহ নানান সমস্যা তৈরি হয়েছিল । একসঙ্গে তিন মেয়ের জন্ম দেওয়ায় সমাজও নানা কুকথা বলেছে । কিন্তু একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন মেয়ে আজ কামাল করে দিয়েছে সব বিষয়ে । সম্প্রতি জাতীয়স্তরে তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতায় একসঙ্গে লড়াই করে রুপো জিতে ফিরল তিন বোন । এই গল্প যেন ছাপিয়ে যায় মহাবীর লাল ফোগটের দঙ্গল সিনেমার চিত্রনাট্যকেও ।
1 থেকে 3 ডিসেম্বর উত্তরাখন্ডের দেরাদুনে আয়োজিত হয় ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত তাইকোন্ডো ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার জাতীয়স্তরের তাইকোন্ডো প্রতিযোগিতা । তাতেই পুমসে গার্লস ইভেন্টে রূপো জিতল আসানসোলের কুলটির সাঁকতোড়িয়ার বাসিন্দা তিনকন্যে সুচেতা, রঞ্জিতা, সুপ্রীতা ।
বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পেশায় গৃহশিক্ষক । এলাকায় রূপম স্যার বলেই পরিচিত । মা সুনেত্রা দেবী স্বামীর কোচিং সেন্টারে সহযোগিতা করেন । বামাপ্রসাদবাবু এবং সুনেত্রা দেবীর তিনকন্যা সন্তান সুচেতা, রঞ্জিতা, সুপ্রীতা । বর্তমানে সদ্য সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে তারা । স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলের ছাত্রী । কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান তাইকোন্ডো সবেই পারদর্শী হয়ে উঠেছে তারা । গত বছর জাতীয়স্তরে ব্রোঞ্জের পর এবছর রূপো জিতেছে । আগামী দিনে সোনা জেতা এবং আন্তর্জাতিকস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় তাদের লক্ষ্য ।
যদিও মেয়েরা সাফল্য পেলেও বাবা রয়েছেন চিন্তায় । সাধারণ গৃহশিক্ষকতার পেশায় বামাপ্রসাদবাবু কীভাবে বা আগামিদিনে মেয়েদের এই খেলায় খরচ সামলাবেন । তাদের ডায়েট থেকে শুরু করে পোশাক, বিদেশে যাওয়ার খরচ-সহ আরও নানান আনুষঙ্গিক খরচ তো আছেই । এই বিষয়ে বামাপ্রসাদবাবুর বক্তব্য, "যদি কোনও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহায়তা করে তাহলে আমার মেয়েরা উপকৃত হবে ।"
মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, "ছোট থেকেই অনেক গঞ্জনা শুনতে হয়েছে তিনমেয়েকে একসঙ্গে জন্ম দেওয়ার জন্য । কিন্তু আজ সমস্ত অপমানের জবাব দিয়ে দিয়েছে আমার তিন মেয়ে । তারা যেভাবে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে আমি চাইব যেন ওরা ভালো করে খেলে যায় ।"