আসানসোল, 16 এপ্রিল : প্রথমবারের জন্য আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ 'বহিরাগত' শত্রুঘ্ন সিনহার হাত ধরে বিজেপিকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ধ্বজা উড়ল তৃণমূলের ৷ শত্রুঘ্ন সিনহা জয়ী হয়েছেন তিন 3 লাখ 3 হাজার 209 ভোটে ৷ (Shatrughan Sinha Wins) ৷ 2014 ও 2019 লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ এদিন জয়ের পর টুইট করে এই ফলের জন্য আসানসোলবাসী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা ৷
তথ্য বলছে, 2019 লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে 1 লক্ষ 97 হাজার 637 ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় । বাবুলের প্রাপ্ত ভোট ছিল 6 লক্ষ 33 হাজার 378 । অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন পেয়েছিলেন 4 লক্ষ 35 হাজার 741টি ভোট । যদি 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে যদি তাকানো যায়, সে সময় বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছিলেন 4 লক্ষ 19 হাজার 983টি ভোট । অর্থাৎ 2014 সালের তুলনায় 2019 লোকসভা ভোটে হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে ভোট বেড়েছিল বিজেপির ৷
আরও পড়ুন : বিদ্বেষ-মুক্ত ভারত গড়ার পথ দেখাল আসানসোল-বালিগঞ্জ, টুইট অভিষেকের
তবে 2021 বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত কয়েক বছরে এই কেন্দ্রে নিজেদের শক্তি ক্রমে বাড়িয়েছে ঘাসফুল শিবির ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভা ভোটের অন্তর্গত 7টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পেয়েছিল তৃণমূল ৷ কুলটি এবং আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি ৷ আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা পল, যাঁকে এবারের লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি ৷ কিন্তু নিজেকে ঘরের মেয়ে দাবি করে প্রচারে ঝড় তুলেও জিততে পারলেন না অগ্নিমিত্রা ৷ এমনকি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেও শত্রুঘ্ন সিনহার থেকে কম ভোট পেয়েছেন তিনি ৷ 2021 নির্বাচনের নিরিখে সাত বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রে 60 হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল ৷ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা গেল ঘাসফুল শিবির নিজেদের পক্ষে সেই ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছে তিন লাখেরও বেশি ভোটে ৷ 2019 লোকসভার নিরিখে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে প্রায় পাঁচ লাখ !
এদিনের ফলাফলকে তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ এর ফলে একদিকে যেমন বঙ্গ বিজেপির আসন সংখ্যা সংসদে 18 থেকে কমে হল 17 ৷ তেমনই তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা 22 থেকে হল 23 ৷ কিন্তু আসানসোলের মতো কেন্দ্রে বিজেপির এরকম ফলাফলের কারণ কী, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি উঠে আসছে তাদের দিক থেকে হিন্দিভাষীদের মুখ ফেরানোর বিষয়টিও ৷ 2019 ও 2014 সালের মতো মোদি হাওয়া এই উপনির্বাচনে স্বাভাবিক ভাবেই ছিল না, সম্ভবত এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও ৷ এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
আরও পড়ুন : ‘পোয়েটিক জাস্টিস’, আসানসোল-বালিগঞ্জে জয়ে উচ্ছ্বসিত বাবুুল
অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষে এই বিপুল সমর্থন বলে দিচ্ছে, বহিরাগত প্রচার হলেও শত্রুঘ্ন সিনহাকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন আসানসোলবাসী ৷ হিন্দিভাষী ভোটও এসেছে তৃণমূলের ঝুলিতে ৷ বাংলার রাজনীতিতে বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একেবারে তৃণমূল স্তরের রাজনীতি আর কেউ বোঝেন না, ভোটের হাওয়া আগাম বুঝতে পারেন তিনি ৷ পোড়া খাওয়া রাজনীতিবিদ তৃণমূল সুপ্রিমো শত্রুঘ্নকে এই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে যে কোনও ভুল চাল দেননি তার প্রমাণ 'বিহারীবাবুর' এই বিপুল জয় ৷