দুর্গাপুর , 20 অক্টোবর: দুর্গাপুরের অনামিকা গড়াই । জন্মের দু'বছর পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই । আর এত সব প্রতিকূলতার মাঝেও বিশ্বমঞ্চে ভারতকে গর্বিত করেছে । দেশে ও বিদেশে সাঁতারের বিভিন্ন ইভেন্টে শারীরিকভাবে বিশেষভাবে সক্ষম অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অনামিকা গড়াই বহু পদক পেলেও তার লক্ষ্য একটাই । লক্ষ্য- প্যারা অলিম্পিকে দেশের জন্য স্বর্ণপদক লাভ । লক্ষ্য- 50 মিটার ব্যাক স্ট্রোকে বিশ্ব রেকর্ড গড়া । কিন্তু, অনামিকার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি তার স্বপ্নের পথে আজ প্রধান বাধা দরিদ্রতা ।
দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের বি-জ়োন আর্যভট্ট রোডের বাসিন্দা কিংশুক ও দোলা গড়াইয়ের একমাত্র মেয়ে অনামিকা গড়াই । সে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী । মাত্র দু'বছর বয়সে অনামিকার বাবা-মা জানতে পারেন, যে তাঁদের মেয়ে স্নায়ু রোগজনিত কারণে হাঁটাচলা করতে পারবে না । এমনকী তার দু'টি হাতও খুব বেশি সক্ষম নয় । অনামিকার বাবা সেই সময় বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা দলে একজন গিটার শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন । মা গৃহবধূ । চিকিৎসকরা বহু চেষ্টা চালিয়েও স্নায়ু রোগ থেকে অনামিকাকে মুক্তি দিতে পারেনি ।
শেষে একজন চিকিৎসক অনামিকার মা ও বাবাকে বলেন, তাদের মেয়েকে নিয়মিত ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে । অনামিকার বাবা-মায়ের পক্ষে আর্থিক অনটনের কারণে নিয়মিত ফিজ়িয়োথেরাপি করানো হয়ে ওঠেনি । সেই সময় অনামিকার পিসি বলেন, তাকে সাঁতার শেখাতে । তাহলে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে ।
দুর্গাপুরের একটি সুইমিংপুলে জলে নেমে পড়ে অনামিকা গড়াই । তখন তার বয়স মাত্র 6 । ধীরে ধীরে অনামিকা একজন দক্ষ সাঁতারুর মতো সাঁতার কাটতে থাকে । প্রশিক্ষক ত্রিদেব ভট্টাচার্যর হাত ধরেই অনামিকার প্রথম সাঁতার শেখা । এরপর 2013 সালে কলকাতার কুমোরটুলিতে রাজ্য প্যারা সাঁতার প্রতিযোগিতায় নেমে সাফল্য পায় সে । তারপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । 2017 সাল পর্যন্ত রাজ্য স্তরের প্যারা সুইমিং সমস্ত প্রতিযোগিতাতে শুধুই সাফল্য অনামিকা গড়াইয়ের । এরপর চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করা অনামিকা সাঁতারের জাতীয় প্রশিক্ষক প্রশান্ত কর্মকারের নজরে পড়েন । জাতীয় প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতায় প্রথম ইন্দোরে এরাজ্যের হয়ে তিনটি রৌপ্য পদক জয় করে।
পরের বছর কর্নাটকে রাজ্যের হয়ে দুটি স্বর্ণ এবং দুটি রৌপ্য পদক জয় করে অনামিকা । তার পরের বছর জয়পুরে তিনটি স্বর্ণপদক ও তার পরের বছর রাজস্থানে উদয়পুরে জাতীয় প্যারা সাঁতারের আসরে তিনটি স্বর্ণপদক এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে সে ।