পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Asansol School Situation: ছাত্রছাত্রীরা আসে না, তবু একা কুম্ভের মতো স্কুল আগলে সুকুমার স্যর!

স্কুলে আসে না ছাত্র-ছাত্রীরা ৷ অথচ অবসর নেওয়ার পরও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ভালোবাসার টানে অতিথি শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগদান ৷ কিন্তু ক্লাসরুমে সারাদিম একা কুম্ভের মতো বসে থাকেন সুকুমার স্যর (Asansol Upper Primary School)।

Asansol School Situation
একা কুম্ভের মতো স্কুল আগলে সুকুমার স্যর

By

Published : Mar 3, 2023, 7:40 PM IST

স্কুলে আসে না ছাত্রছাত্রীরা

আসানসোল, 3 মার্চ: অবসর নিয়েছেন বছর দুই আগেই। তবু পড়াতে ভালোবাসেন ৷ ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার টানে তাই অতিথি শিক্ষক হিসেবে ফের স্কুলে যোগদান। কিন্তু চাকরির শেষ জীবন যে এত কষ্টের হবে ভাবতে পারেননি শিক্ষক সুকুমার কাইতি। রোজ স্কুলে আসেন। স্কুল ঝাড়ামোছা করেন। রেজিস্ট্রার উলটে পালটে দেখেন। কিন্তু পড়াতে পারেন না। কারণ স্কুলে একটাও ছাত্র নেই। ফাঁকা ক্লাসরুমে সারাদিম একা কুম্ভের মতো বসে থাকেন সুকুমার স্যর। ছাত্রছাত্রীরা আসে না (Asansol Upper Primary School Situation)।

আসানসোলের মহিশীলা গ্রাম আপার প্রাইমারি স্কুল। মহিশীলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গা-ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে এই স্কুল। অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিউতি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা থাকলেও আপার প্রাইমারি স্কুলে পড়তে আসে না আর কেউ। এই স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর কথা। রেজিস্ট্রারে 11 জন ছাত্রছাত্রীর নাম লেখা আছে। আসে না কেউই। স্কুল চত্বরে এক ছাত্রী ও তার মা কে দেখা গেল শুধু। মা এসেছেন মেয়ের টিসি নিতে। অন্য স্কুলে ভরতি করবেন। সত্যি তো একা মেয়েকে কী করেই বা স্কুলে পাঠাবেন।

স্কুলে একজনই শিক্ষক সুকুমার কাইতি। আগে তিনি বারবনী গৌরাণ্ডি স্কুলের সহপ্রধান শিক্ষক ছিলেন। বছর দুই আগে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু চাইতেন স্কুলে ফিরতে। আবার পড়াতে। আবার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতে। তাই অতিথি শিক্ষক হিসেবে পুনরায় যোগদান করেছেন। কিন্তু ভাগ্যে পড়েছে এমন একটি স্কুল যেখানে তার কোনও কাজ নেই। সকাল সাড়ে দশটায় স্কুলে আসেন প্রতিদিন। স্কুলের দরজা খুলে বসেন। ঝাড়ামোছা করেন। রেজিস্ট্রার নাড়াচাড়া করে দেখেন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আসা পোশাক বই যত্ন সহকারে রাখেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রী নেই।

একা কুম্ভের মতো স্কুল আগলে সুকুমার স্যর

আরও পড়ুন:স্কুল আছে, নেই স্থায়ী শিক্ষক; গোঘাটে শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল ছবি

সুকুমার কাইতি বলেন, "ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়েছি বহুবার। বুঝিয়ে এসেছি। ফোন করে ডেকেছি। কেউ আসে না। আসলে এই অঞ্চলে শিক্ষার সংস্কৃতি তেমন নেই। বেশিরভাগই দুস্থ, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের বাস। তাঁরা বাড়ির মেয়েদের পরিচারিকার কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। কিংবা কিশোর অবস্থাতেই ছাত্রদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইটভাটায় কিংবা কয়লা কুড়োতে। ফলে কেউ পড়তে আসে না। স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি ইতিমধ্যে জানিয়েছি, তাঁরাও চেষ্টা করেছেন ৷ কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা কেউ আসছে না।

স্কুল চত্বরেই পাওয়া গেল এক ছাত্রীর মাকে। ওই ছাত্রীর মা তাঁর মেয়েকে নিয়ে এসেছেন স্কুল থেকে টিসি নিতে। তিনি জানান "স্কুলে পঠনপাঠন হয় না। একা স্কুলঘরে মেয়েকে কী করে পাঠাব পড়াতে? সেই কারণেই অন্য স্কুলে ভরতি করব মেয়েকে। কিন্তু স্কুল থেকে টিসি পাওয়া যাচ্ছে না।"
জেলা শিক্ষা দফতর থেকে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট 90টি স্কুলকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের অভাবে স্কুলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দফতর। তার মধ্যে মহিশীলার এই আপার প্রাইমারি স্কুলটিও আছে। আগামিদিনে এই স্কুলটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন হয়তো এই অকাজ থেকে ছুটি মিলবে সুকুমার স্যরের!

আরও পড়ুন:শিক্ষক ছাড়াই চলছে স্কুল, মিড-ডে মিল খেয়ে বাড়ি যাচ্ছে পড়ুয়ারা

ABOUT THE AUTHOR

...view details