জামুরিয়া, 2 সেপ্টেম্বর : রাস্তার দুই ধারে সারি দিয়ে পাতা চটের বস্তা । একের থেকে অপরের দূরত্ব হাত খানেক তো হবেই । নির্দিষ্ট সময়, সেই আসনে বসছে খুদেরা । রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে তাঁদের মাস্টারমশাই ।
রীতিমতো কোরোনা নিয়ম মেনে চলছে পথ-স্কুল । অকুস্থল পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়া । মূলত আদিবাসী-পিছিয়ে পড়া ছেলে মেয়েদের জন্য এই পথ-স্কুল চালু করেছেন শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক ।
আসলে, কোরোনা-লকডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ স্কুল । স্বাভাবিক ভাবেই বই-স্কুল থেকে বেশ খানিকটা দূরে পড়ুয়ারা । আর বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে অনলাইন পঠন পাঠন চললেও পড়াশুনা শিকেয় উঠেছে সরকারি স্কুলগুলিতে । তাই আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলের ওই শিক্ষক একক উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন । সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, পড়ুয়াদের মুখে মাস্ক পরিয়ে, হাত সেনিটাইজ করিয়ে প্রতিদিন চলছে পঠন পাঠন ।
জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে'র শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক । জামুড়িয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম জবা । সেখানকার আদিবাসী পাড়ায় পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন । শুধু পড়াশুনা করানোই নয়, নিজ উদ্যোগ 'মিড-ডে' মিলও চালু করেছেন । থাকছে- পাউরুটি, কলা, ডিম ও মিষ্টির প্যাকটে । নিত্যদিনই । খোলা মাঠে, পাড়ার ফাঁকা রাস্তা, বাঁশ বাগানে অথবা মন্দির চত্বরে সোম থেকে শুক্র সপ্তাহে পাঁচ দিন চলছে ক্লাস । বাংলা, ভূগোল ,ইতিহাস, অঙ্কের পাশাপাশি শরীর চর্চার ক্লাসও নিচ্ছেন মাস্টারমশাই ।
খোলা আকাশের নিচে পথ-স্কুল কোরোনা সংক্রমণ রুখতে পড়ুয়াদের শেখাচ্ছেন কীভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । জামুড়িয়ার ন'নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসী পাড়া, শিমুলিয়া পাড়া, কাঁঠাল পাড়া, মালতী পাড়া, বাউরি পাড়া, নীচু জবা পাড়া, উপর জবা পাড়া এলাকায় খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে চলছে স্পেশাল ক্লাস । আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সামগ্রী, পেন, পেন্সিলও দিচ্ছেন শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক ।
দীপনারায়ণের কথায়, "কোরোনার আবহে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেমন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, এমনকি সাফাই কর্মীরা ঘরে বসে নেই । নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন । একজন শিক্ষক হয়ে আমি ঘরে কীভাবে বসে থাকতে পারি?" নিজের দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, "রাজ্য সরকার আমাকে মাস গেলে সময়ে বেতন দিয়ে দিচ্ছে । আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব কিছু রয়েছে । সেই কাজটাই আমি করছি ।"
মাস্টারমশাইয়ের এই কাজে আপ্লুত-উদ্বুদ্ধ অভিভাবকরাও । বলছেন,"আমরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি । মাঝে মাঝে কমিউনিট কিচেন করে পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করছি আমরা ।" দীপনারায়ণের এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরাও । ইতিমধ্যেই গোটা তিনেক কমিউনিটি কিচেন গড়ে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা ।