দুর্গাপুর, 7 অগস্ট: 2011 সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর প্রদীপ মজুমদার মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন (Pradip Kumar Majumdar Will Work for Development)। বলাবাহুল্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে 'আমুল পরিবর্তনের' অন্যতম প্রধান কান্ডারী প্রদীপ মজুমদার । 2011-এর পর কৃষিক্ষেত্রে বাংলার অসামান্য সাফল্যের কারণে কেন্দ্রের কাছ থেকেও সেরার শিরোপা মিলেছে বহুবার ।
শুধুমাত্র প্রথাগত কৃষি ব্যবস্থায় পরিবর্তন নয়, প্রদীপ মজুমদারের হাত ধরে বাংলার কৃষিক্ষেত্রে বিকল্প চাষে বিপ্লব এসেছে বলা যায় । শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন, সদাহাস্য মিষ্টভাষী প্রদীপ মজুমদারকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করেন । কিন্তু সেবার সিপিএম প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন প্রদীপবাবু । কিন্তু তারপরেও তিনি দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের কাঁকসা ব্লকে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কৃষকদের উন্নয়নের জন্য বহু কাজ করেন নীরবে ।
উন্নয়নের জন্য বিকল্প আর্থিক যোগানের চিন্তা নিয়েই মন্ত্রিপদ সামলাতে প্রস্তুত প্রদীপ মজুমদার আরও পড়ুন:দুর্গাপুরে ফিরতেই মন্ত্রী প্রদীপকে সাদর অভ্যর্থনা অনুগামীদের
2021 সালে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে প্রদীপ মজুমদারকেই প্রার্থী করেন । কিন্তু এবার আর পরাজয় নয় । এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন প্রদীপ মজুমদার । প্রথম থেকেই একটা অনুমান ছিল যে, এই গুণী মানুষকে খুব বেশি দিন ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের তালিকা থেকে বাইরে থাকতে হবে না । মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টাকে তাঁর আরও বড় দায়িত্ব প্রদান করা হল । রাজ্যের নতুন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন প্রদীপ মজুমদার ।
কৃষি উপদেষ্টা হিসাবে নিজের কার্যকালে গ্রামীণ প্রান্তিক চাষিদের সঙ্গে তাঁর নিবীড় যোগাযোগ তৈরি হয় । কিন্তু এবার রাজ্যের গ্রাম বাংলার মানুষের আশার আলো প্রদীপ মজুমদার । মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর শনিবার তিনি দুর্গাপুরে আসেন । তবে হুগলি জেলা থেকেই তৃণমূলকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ারে বারবার রাজ্যের নয়া মন্ত্রীর গাড়ি থমকে দাঁড়ায় । পূর্ব বর্ধমান, কাঁকসা, দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড় বহু জায়গায় শয়ে শয়ে তৃণমূলকর্মীরা রাজ্যের নয়া পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে সম্বর্ধিত করেন । দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে অকাল উৎসব দেখা যায় । শনিবার কার্যত প্রদীপবাবুকে নিয়ে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয় শিল্প শহর জুড়ে ।
দুর্গাপুর নগর নিগমের এক নম্বর ব্লক অফিসে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো । রাজ্যের দাপুটে রাজনীতিবিদ অজিত পাঁজার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন প্রদীপ মজুমদার । অজিত পাঁজার নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন বহুবার । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ অনুরোধে 2011 সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা হিসেবে কাজে যোগ দেন । ডাকাবুকো রাজনীতিবিদ তিনি নন । সুমিষ্ট ব্যবহারের দ্বারা তিনি দুর্গাপুরের শুধুমাত্র তৃণমূল কর্মীদের নয়, আমজনতার হৃদয় জয় করেছেন । স্বভাবতই প্রদীপ মজুমদার রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পরে অকাল উৎসব দেখা গেল শনিবার । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদীপ মজুমদারের ওপর আস্থা রেখেছেন ।
আরও পড়ুন:পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে অক্সিজেন জোগাতে তৈরি কালিন্দ্রীর নয়া সেতু
তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো বারেবারেই কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । 100 দিনের প্রকল্পের বকেয়া টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, আবাস যোজনা এই সমস্ত ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ বলে অভিযোগ রাজ্য সরকারের । তাই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন ঠিক সেই সময় রাজ্যের নবনিযুক্ত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ইটিভি ভারতকে । স্পষ্ট করে তিনি জানিয়ে দিলেন প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে তিনি এতদিন কাজ করেছেন । তবে এবার তার কাছে চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন । কারণ কেন্দ্রের বরাদ্দ মিলছে না । প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে হবে ।
কেন্দ্রের প্রকল্পগুলির জন্য বরাদ্দ অর্থ না পাওয়ার কারণে উন্নয়নকে বন্ধ করে রাখা যাবে না । তাই প্রদীপবাবুর কথায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বিকল্প আর্থিক যোগানের কথা ভাবছি । প্রদীপবাবু আরও জানান, কেন্দ্রের সমস্যা হচ্ছে নাম নিয়ে এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ দিয়ে যা কিছু হবে তাতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগাতে হবে এটাই চাইছে ওরা । মুখ্যমন্ত্রী হয়ত তাতেই রাজি হবেন । কারণ তাতে গ্রাম-বাংলার মানুষ তো অন্তত পক্ষে উপকৃত হবেন । মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই নতুন দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করতে বদ্ধপরিকর প্রদীপ মজুমদার । সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন । গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্যের ধারাকে বজায় রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর কাছে ।