আসানসোল, 14 অগস্ট:স্বাধীনতার 75তম বর্ষ পেরিয়ে যাচ্ছে । বর্ণাঢ্য উৎসবে গোটা দেশ মেতে উঠছে । 'হর ঘর তিরঙ্গা'-য় ভরেছে চতুর্দিক । অথচ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল 'নেহরুর স্ত্রী' তকমা পেয়ে আজও নিজের সমাজ থেকে বিচ্যুত বিতাড়িত এক আদিবাসী মহিলা । হ্যাঁ, আশ্চর্য হলেও সত্যি । একটি সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র ক'রে পাঞ্চেতের আদিবাসী মহিলা বুধনি মেঝান আদিবাসী সমাজের কাছে 'নেহরুর বৌ' হয়ে যান । আর আজও তাঁর 80 বছর বয়সে সেই গ্লানি, কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন বুধনি । আজও নিজের সমাজে তাঁর ঠাঁই নেই ।
ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন: দিনটা ছিল 1959 সালের 6 ডিসেম্বর । বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন । দুই রাজ্যের লোকে লোকারণ্য পাঞ্চেত এলাকা । হবে নাইবা কেন ! পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন করতে এসেছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু । ডিভিসি কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, যাঁদের শ্রম দিয়ে এই জলাধার তৈরি হয়েছে, সেই শ্রমিকরাই পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে বরণ করুন । ডাক পড়ল পঞ্চদশী আদিবাসী সুন্দরী বুধনি মেঝান ও আরও এক আদিবাসী যুবক রাবণ মাঝির । স্থানীয় আদিবাসী গ্রাম কারবানাতে বাড়ি ছিল বুধনি মেঝানের ।
কী হয়েছিল সে দিন: ঠিক হল, মঞ্চে বুধনি মেঝান এবং রাবণ মাঝি উপস্থিত থাকবেন আর বুধনি মেঝান পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে স্বাগত জানাবেন । জওহরলাল নেহরু মঞ্চে এলে পরিকল্পনা মাফিক বুধনি মেঝান তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেন । জওহরলাল নেহরুও মজার ছলে সেই মালা নিজের গলা থেকে খুলে বুধনি মেঝানের গলায় পরিয়ে দেন । শুধু তাই নয়, পাঞ্চেত জলাধারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় বুধনি মেঝানকে ডেকে নেন জওহরলাল নেহরু । পণ্ডিত নেহরুর বিশেষ ইচ্ছেয় বুধনির হাত দিয়েই সুইচ টিপে উদ্বোধন হয় পাঞ্চেত জলাধারের ।
আরও পড়ুন:নেই সংগ্রহশালা, বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর স্মৃতিবিজড়িত পালাড়া গ্রাম ও চন্দননগর বিস্মৃতির অতলে
বুধনি পেল 'নেহরুর বউ'-এর তকমা: জীবনের এত বড় পাওয়া কখনও আশা করেননি বুধনি মেঝান । আর তাই সুখানুভূতি নিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি ৷ কিন্তু কারবানা গ্রামে ঢুকতেই সব কেমন অচেনা । কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন না । সবাই দূরত্ব বজায় রাখছেন । সেই দিনই গ্রামের মোড়ল'রা সালিশি সভা ডেকে বুধনি'কে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করল । বুধনি অবাক । কী অপরাধ করেছে সে ? মোড়ল নিদান দিলেন, বুধনি জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে মালাবদল করেছে অর্থাৎ সে এখন ভিনজাতের লোকের স্ত্রী । তাই তাকে তাদের সমাজে আর নেওয়া হবে না । বুধনিকে বিতাড়িত করা হয় গ্রাম থেকে । এরপর থেকে বুধনির আর খোঁজ পাওয়া যায় না । শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে ডিভিসির থেকে তার চাকরিও চলে যায় । বুধনি এলাকা ছেড়ে নিরুদ্দেশে চলে যায় ।
রাজীব গান্ধি ফেরালেন চাকরি: বিষয়টি নিয়ে সেই সময় থেকে নানা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হয় । 1988 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন এই ঘটনার কথা । তিনি ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, বুধনি মেঝানকে খুঁজে নিয়ে আসতে হবে এবং তার চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে ।