সুইডেনে বাংলার মেধাবী গবেষক ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু দুর্গাপুর, 15 অক্টোবর: সুইডেনে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু দুর্গাপুরের এক গবেষক ছাত্রীর ৷ এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলেছে পরিবার ৷ পাশাপাশি মেয়ের দেহ বাড়ি নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছেন মৃতের মা ৷
জানা গিয়েছে, মৃত গবেষকের নাম রোশনি দাস, তিনি দুর্গাপুরের ডিপিএল টাউনশিপের ইএন টাইপের বাসিন্দা ৷ পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো তাঁর কথা হয় গত মাসের 29 তারিখ ৷ এরপর 30 তারিখ থেকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । তখনও পর্যন্ত মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেনি পরিবার । এই মাসের 12 তারিখ সুইডেন দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হয় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে । সেখান থেকে দিল্লি, তারপর কলকাতার ভবানী ভবনে যোগাযোগ করা হয় ৷ লালবাজার আবার দুর্গাপুর থানায় যোগাযোগ করে । এরপরেই 13 তারিখ রোশনির মৃত্যুর খবর পায় পরিবার ৷
পুলিশের তরফে জানানো হয়, এক অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর থেকে রোশনির দেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ এই ঘটনায় এক সুইডেন নাগরিককে নাকি গ্রেফতারও করেছে সেখানকার প্রশাসন । তবে কী কারণে রোশনির মৃত্যু হল, সেটা নিয়ে ধন্দে গোটা পরিবার ।
32 বছর বয়সির রোশনির স্কুল জীবন কেটেছে দুর্গাপুরেই । এরপর বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে জুলজিতে অনার্স পাশ করেন তিনি ৷ তারপর পড়াশোনার জন্য ওড়িশা যান রোশনি ৷ ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকলোজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি । সেই পড়া শেষ করে সুইডেনে পাড়ি দেন দুর্গাপুরের এই মেয়ে ৷ সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউরো নিয়ে পোস্ট ডক্টরেট করছিলেন রোশনি ।
রোশনির মা মমতা দাসের কথায়,তাঁর মেয়ে গবেষণা করতে 2018 সালে সুইডেনে যান । কিন্তু সময়মতো তিনি গবেষণার কাজ শেষ করতে পারেনি ৷ তাই অতিরিক্ত সময়ে রোশনি ওই দেশে থেকেই গবেষণার কাজ শেষ করবে বলে ঠিক করেছিলেন । কয়েকদিন আগে তিনি মায়ের কাছে টাকাও চেয়েছিলেন ৷ তিনি বলেন, " আমি গত অক্টোবরের 6 তারিখ তাঁকে টাকা পাঠাই । অন্যান্য বাড়ে টাকা পেলে জানায় কিন্তু এবার সেটাও করেনি । তারপরেই তাঁর সমস্ত ফোন বন্ধ পাওয়া যায় । এরপরে আমাদের কাছে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে । আমরা সুইডেন সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যারা তাঁকে এভাবে মেরে ফেলল তারা যেন কঠিন শাস্তি পায় । আমার মেয়ের দেহ আমার কাছে যেন ফিরে আসে ।"
আরও পড়ুন:ভিন রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যু, সিবিআই তদন্তের দাবি পরিবারের
রোশনির কাকার ছেলে সুপ্রতীক দাস বলেন," আমার জেঠিমার সঙ্গে রোশনির গত কয়েকদিন ধরেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । তারপর শোনা যায় যে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ৷ সে যে আবাসনে থাকত সেখানেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি । এই ঘটনায় একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এমন কথাই শুনেছি । কিন্তু কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না । বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন যাতে আমার দিদির দেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় ।" বর্ধমান দুর্গাপুরের সাংসদ সুরিন্দর সিংহ আলুওয়ালিয়া রোশনির দেহ সুইডেন থেকে বাংলায় আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন । এখন পরিবার চাইছে, রোশনির মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি হোক ৷ আর মেয়ের দেহ যেন খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।