রানিগঞ্জ, 24 এপ্রিল : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিদ্রোহী কলমের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে লিখে গিয়েছিলেন "মোরা এক বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন মনি, হিন্দু তাহার প্রাণ।" কবির সেই সম্প্রীতির বার্তার প্রতিফলন দেখা গেল তাঁরই জেলায়, পশ্চিম বর্ধমানের কোলিয়ারি শহর হিসেবে পরিচিত রানিগঞ্জে (Communal Harmony in Raniganj)।
পরিবারহারা হিন্দু বন্ধুর শেষকৃত্যের কাজ সারলেন তাঁর মুসলিম দোস্ত । মুসলিম বন্ধুর নাম মহম্মদ শামসুদ্দিন । তাঁর বাড়ি রানিগঞ্জের গির্জা পাড়ায় । হুগলির মগরা এলাকার বাসিন্দা যোগেন্দ্র প্রসাদ দীর্ঘদিন ধরে রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একটি বেসরকারি বাসে খালাসির কাজ করতেন । যোগেন্দ্র আপন বলতে কেউ ছিল না ৷ স্বজনহীন যোগেন্দ্র প্রসাদের বসবাস ছিল রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিক বিশ্রামাগারে । তবে দিনকয়েক আগে আচমকাই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন পঞ্চান্ন বছরের যোগেন্দ্র । কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর 14 এপ্রিল আইএনটিটিইউসির সেই শ্রমিক বিশ্রামাগারেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷
আরও পড়ুন :সুন্দরবন বাঁচাতে বন বিভাগ ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে শুরু চারা রোপণ
যোগেন্দ্র ছিলেন গির্জাপাড়ার বাসিন্দা শামসুদ্দিনের প্রাণের বন্ধু ৷ এই দুনিয়ায় যোগেন্দ্র আপন বলতে এই একটি মানুষকেই বুঝতেন ৷ আবার আত্মীয় স্বজনহীন যোগেন্দ্র ছিলেন শামসুদ্দিনের ঘরের লোকের মতোই ৷ তাই বন্ধু বিয়োগে কষ্ট পেয়েছিলেন খুব ৷ আবার সাচ্চা ইয়ারের মতো যোগেন্দ্র আত্মার শান্তি কামনায় যতটুকু করার সবটাই করেছেন ৷ বন্ধুত্বের মাঝে বাধা হয়নি ধর্মের বেড়া ৷ হিন্দু রীতি অনুযায়ী যোগেন্দ্রর মুখাগ্নি করেন শামসুদ্দিন । তারপর হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী অশৌচ পালন থেকে মাথা মুণ্ডন, পিন্ডদান-সহ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের সমস্ত কিছুই হয় শামসুদ্দিনের হাত ধরেই । যা দেখে আবেগপ্রবণ কোলিয়ারি শহরের বাসিন্দারা ৷ নিজেদের উদ্যোগেই শামসুদ্দিনের দিকে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয়রা । হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী পারলৌকিক ক্রিয়ার পাশাপাশি ছিল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন । শোকের মাঝেও শামসুদ্দিনের এই সম্প্রীতির বার্তায় চোখের কোণ খুশিতে চিকচিক করে উঠেছে এলাকাবাসীর ৷