আসানসোল, 12 জুন : বাবা দিনমজুর । মা বাড়ি বাড়ি কাজ করেন । কিন্তু এতে সংসারের চার-পাঁচটা পেট চলবে কী করে ? ভরসা ছিল দিনের বেলায় স্কুলের মিড-ডে-মিল । দিনের জোগাড় হয়ে গেলেও রাতের খাবার নিয়ে আবার সংগ্রাম । এই পরিস্থিতিতে স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের সঙ্গে কাজ করতে চলে যেত সালানপুরের কয়েকজন খুদে । কেউবা ঠোঙা বানানোর কাজ করত । ধীরে ধীরে শিশুশ্রমের অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া এই ছোট্ট প্রাণগুলোকে দিশা দিয়েছে এলাকারই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের পড়ানো শুরু করেছে এই সংস্থা ।
সালানপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল । বেশিরভাগ পরিবারেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । সত্যি কথা বলতে সন্তান-সন্ততির পেট চালানোটাও একটা সংগ্রাম । দিনমজুরি বা অন্যের বাড়ি কাজ করে সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেন না বাবা-মা'রা । এই অবস্থায় স্কুলে দিনের বেলার মিড-ডে-মিলই ভরসা । তাই খিদের জ্বালায় স্কুলে যাওয়া । পড়াশোনাটা কোথাও যেন বিলাসিতা । দিনের জোগাড় হলেও চিন্তা ছিল রাত নিয়ে । কোনওদিন আধপেটা, আবার কোনওদিন না খেয়েই দিন কাটত । বাধ্য হয়েই স্কুল থেকে ফেরা ছোট্ট ক্লান্ত শরীরগুলো মায়ের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি কাজ করতে বেরিয়ে যেত । কেউ বাড়িতে বসে ঠোঙা বানাত । কেউ আবার কয়লা খাদানে কয়লা কুড়োতে যেত । পড়াশোনা, স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনের স্বপ্ন রাতের ক্লান্ত ঘুমের ভিড়ে হারিয়ে যেত । বিষয়টি নজরে আসে রূপনারায়ণপুরের কয়েকজন যুবক-যুবতির । রূপনারায়ণপুর পিস ওয়েলফেয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শুভদীপ সেন এবং তনু বিশ্বাস নামে দু'জনে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে অভিভাবকদের বোঝানো শুরু করেন । এই দিশাহীন ছেলে-মেয়েদের জন্য পড়াটা খুব জরুরি, সেটা বলার চেষ্টা করেন ।