আগুরি পরিবারের দুর্গাপুজো আসানসোল, 2 অক্টোবর: একদা উগ্রক্ষত্রিয় বীর সেনানি নকড়ি রায় এবং রামকৃষ্ণ রায় পঞ্চকোট রাজত্বে বর্গী আক্রমণ রুখে দিয়েছিলেন ৷ আর তাই রাজা খুশি হয়ে নকড়ি রায় এবং রামকৃষ্ণ রায়কে বহুল পরিমাণে নিষ্কর জমি প্রদান করেছিলেন । তাঁরাই সেখানে জনবসতি তৈরি করে আসানসোল গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন । বসবাস শুরু হয় উগ্রক্ষত্রিয় আগুরি পরিবারের । 1149 সনে শুরু হয় সেই আগুরি পরিবারে দুর্গাপুজো । বর্তমানে সেই পুজো পারিবারিক বিস্তৃতির কারণে নয়টি পুজোয় রূপান্তরিত ।
বর্তমান আসানসোলের যে আধুনিক রূপ দেখা যায়, তা তখন ছিল জঙ্গলাকীর্ণ । আসন গাছের জঙ্গল ঘেরা ছিল সেই জমি । নকড়ি রায় এবং রামকৃষ্ণ রায় রাজার কাছে নিস্কর জমি পেয়ে সেই জঙ্গল কেটে বসতি তৈরি করেন । আসন গাছের নামানুসারেই সেই বসতির নাম হয় আসানসোল । যা বর্তমানে আসানসোল গ্রাম হিসেবে পরিচিত । সেই আসানসোল গ্রামে নকড়ি এবং রামকৃষ্ণ রায় 1149 সনে শুরু করেন দুর্গাপুজো ।
বর্তমানে পারিবারিক বিস্তৃতির কারণে সেই পুজো নয়টি পুজোতে বিভক্ত হয়েছে । বড়মা, মেজমা, সেজমা এ রকম নাম দিয়ে নয়টি দুর্গাপুজো হয় পরিবারে । যার মধ্যে আটটি দুর্গামন্দিরে হয় দুর্গা পুজো, একটিতে হয় নবপত্রিকার পুজো । পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি পুজোয় নবমীতে কুমারী পুজোরও প্রচলন আছে ।
পরিবারের সদস্য তারকেশ্বর রায় জানান, "এ বছর 289তম বছরে পদার্পণ করল আসানসোল গ্রামের এই দুর্গাপুজো । আগে এই পুজোতে ছাগ বলি এবং মহিষ বলির প্রথা থাকলেও বর্তমানে বলিদান প্রথা বন্ধ করা হয়েছে । পুজো উপলক্ষে উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে গোটা আসানসোল গ্রামের মানুষ । কর্মসূত্রে বাইরে যাঁরা থাকেন, তাঁরা চলে আসেন পুজোর সময় । পুজোর চার দিন খাওয়া দাওয়া আড্ডা চলতে থাকে পারিবারিক পুজো মণ্ডপে ।"
আরও পড়ুন:প্রতিমার সাজ-রফতানিতে ভাটা, পুজোর মুখে হতাশ কুমোরটুলির শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা
তবে এই পুজোতে কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না বলে পরিবারের লোকেদের দাবি। তবে কীভাবে চলে পুজোর খরচ ? উত্তরে তারকেশ্বর রায় জানালেন "পরিবারের দেবত্বর সম্পত্তি রয়েছে অনেক । কৃষিজমি থেকে শুরু করে পুকুর। সেখানেই চাষাবাদ থেকে যা রোজগার হয় তা দিয়েই পুজোর খরচ চলে ।"
আসানসোল গ্রামের আরও এক বাসিন্দা তথা আগুরি সম্প্রদায়ের পারিবারিক সদস্য শ্রীকান্ত রায় জানালেন, "এই পুজোর রীতি অনুযায়ী নয়টি দুর্গা প্রতিমার জন্যই একসঙ্গে দোলা আনতে নিয়ে যাওয়া হয় পারিবারিক পুষ্করিণী রামসায়েরে । সেখান থেকে লাইন দিয়ে সমস্ত দোলা আসে প্রত্যেকটি মন্দিরে । এরপর পুজো শুরু হয় ৷ পুজোর শেষে দশমীর দিন সব প্রতিমা একসঙ্গে নিরঞ্জন করতে নিয়ে যাওয়া হয় সেই রামসায়ের পুকুরেই । নিরঞ্জনের সময় রামসায়র ময়দানে চলে আতশবাজি প্রদর্শন । সেই আতশবাজির প্রদর্শন দেখতে দূর দূরান্তের মানুষ আসে ।"