আসানসোল, 25 সেপ্টেম্বর: আজ বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস । এই দিনে বিশ্বজুড়ে ফার্মাসিস্টদের যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টরা গুরুত্ব পায় না ৷ এমনটাই আক্ষেপ ফার্মেসি কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরা।
সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র ওষুধের দোকানে বসে থাকা ফার্মাসিস্ট ছাড়া তাঁদের গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন । অথচ ওষুধ তৈরি থেকে শুরু করে ওষুধ দেওয়া এবং ওষুধ খাওয়ার পর রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা সমস্ত বিষয়েই একজন ফার্মাসিস্টের ভূমিকা থাকে । আসুন জেনে নিই ফার্মাসিস্ট সম্পর্কে সেইসব অজানা তথ্য ।
কারা হতে পারেন ফার্মাসিস্ট ?
আসানসোল গুপ্ত কলেজ অফ টেকনজিক্যাল সাইন্সের অধ্যক্ষ কল্যাণ কুমার সেন বলেন, "আমাদের দেশে 12 ক্লাস পাস করার পর পরীক্ষা দিয়ে বি-ফার্ম কোর্স বা ডি-ফার্ম কোর্সে ভর্তি হলে ফার্মেসি সম্পর্কে পড়াশোনা করা যায় । পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য এম-ফার্ম, ফার্ম-ডি কিংবা পিএইচডি পর্যন্ত আছে ।"
সাধারণ মানুষ ফার্মাসিস্ট সম্পর্কে কী জানেন ?
কল্যাণ কুমার সেন বলেন, "সাধারণ মানুষ ফার্মাসিস্টদের দেখেন ওষুধের কাউন্টারে অথবা হাসপাতালের কাউন্টারে । কিন্তু ফার্মাসিস্টরা ওষুধ শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ওষুধের গবেষণা থেকে শুরু করে নতুন ওষুধ নিয়ে আসার ভাবনাচিন্তা । তাকে কী করে মার্কেটে নিয়ে আসা যাবে, নতুন ওষুধের ট্রায়াল মনিটরিং থেকে শুরু করে ওষুধ দেওয়ার পরেও যে মনিটরিং করা হয় সমস্তটাই ফার্মাসিস্টরা করে থাকেন । কিন্তু আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত ফার্মাসিস্টদের সেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি । পাশাপাশি ডাক্তারদের সঙ্গে যে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্টরা থাকবে বা রোগীদের তাঁরা মনিটরিং করবে এই জিনিসটা এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে ততটা প্রসার নেই ।
আমাদের দেশে ফার্মাসিস্টের গুরুত্ব কেমন ?
আসানসোল গুপ্ত কলেজ অফ টেকনোলজির আরও এক সিনিয়র অধ্যাপক নিতাইচাঁদ চাউল্যার কথায়, "আমাদের দেশে চিকিৎসকদের মতো ফার্মাসিস্টরা গুরুত্ব পায় না । বিদেশে গেলে দেখা যায় যে একজন ডাক্তারের সঙ্গে সব সময় একজন ফার্মাসিস্ট থাকেন । সেখানে ডাক্তার কিংবা ফার্মাসিস্টকে কল করা হয় । আমাদের দেশে কেউ অসুস্থ হলে শুধুমাত্র ডাক্তারকে কল করা হয় । নার্সকে কল করা হয় । কিন্তু ফার্মাসিস্টকে ডাকা হয় না ।"
ফার্মাসিস্টদের বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে কতটা ?
"আমাদের দেশে সরকার হয়তো সেইভাবে পরিকাঠামো তৈরি করতে পারছে না । কিংবা সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে সেই কারণেই ওয়ার্ক ফার্মাসিস্টদের আমাদের দেশের হাসপাতালে পাওয়া যায় না ।"
হাসপাতালে ওষুধ দিতে পারেন একমাত্র ওয়ার্ক ফার্মাসিস্টরা
নিতাইচাঁদ চাউল্যা আরও বলেন, "হাসপাতালে যখন কোনও রোগী ভর্তি থাকে তখন তার শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকে না । অনেক সময় মানসিক অসুস্থতাও থাকে । এমনকি রোগীর পরিবারের লোকেরা যারা সেখানে থাকে তারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে থাকে । একমাত্র ফার্মাসিস্টেরই অধিকার আছে রোগীকে ওষুধ দেওয়ার । কিন্তু আমাদের দেশে দেখুন হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলিতে ওষুধ দিচ্ছে নার্স কিংবা তাদের বাড়ির লোকজন । হাসপাতালে ওয়ার্ক ফার্মাসিস্ট থাকলে তিনিই রোগীকে ওষুধ দিতে পারবেন ৷ বিশ্লেষণও করতে পারবেন তিনিই যে ওষুধটা রোগীর কাজ করছে কি না ৷ এছাড়াও ওষুধ খাওয়ার পর রোগীর অন্য কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, সেগুলোও তিনি নজর রাখতে পারবেন । বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে আমরা এটাই বলব যে হাসপাতালে ওয়ার্ক ফার্মাসিস্ট নেওয়া চালু হোক ।"
World Pharmacist's Day: চিকিৎসাক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী ? জানুন ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব ও কাজ
জানেন কি যে ফার্মাসিস্টরা আপনাকে সঠিক ওষুধটি দেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁদের গুরুত্ব কতটা ? আমাদের দেশে সচেতনতার অভাবে অনেকেই ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব তেমন বোঝেন না ৷ জেনে নিন তাঁদের কাজ সম্পর্কে ৷
Published : Sep 25, 2023, 7:00 PM IST
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে আসানসোল ইএসআই হাসপাতালের সিনিয়র ফার্মাসিস্ট উৎপল পাণ্ডা জানান, "ফার্মাসিস্টদের দ্বারা রোগীর কাউন্সেলিং খুব প্রয়োজন । এটা আমাদের দেশে খুব কম হয় । রোগী কী ওষুধ খাচ্ছেন, কোন ওষুধের সঙ্গে কোন খাবার খাওয়া যাবে না, কোন ওষুধের সঙ্গে অন্য ওষুধের কতটা পরিমাণ সময়ের ব্যবধান রাখা উচিত এসব কিছুই ফার্মাসিস্টরা ঠিক করে দেন । কিন্তু আমাদের দেশের হাসপাতালে সেই ধরনের ফার্মাসিস্ট রাখা হয় না, ফলে রোগীদের সঠিক অর্থে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যায় ।"
আরও পড়ুন : দুর্ঘটনার পর ঠিক কী অবস্থায় ছিলেন পন্ত, জানালেন উদ্ধারকারী অ্যাম্বুলেন্সের ফার্মাসিস্ট