পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভোজ্যতেল-সহ ট্যাঙ্কার গায়েব, পাচারকারী চক্রের পর্দাফাঁস পুলিশের - ভোজ্যতেল পাচারকারী চক্র

চালক ও খালাসিকে অচেতন করে 60 লাখ টাকার ভোজ্যতেল-সহ একটি ট্যাঙ্কার হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ৷ চালক ও খালাসির চেতনা ফিরলে তারা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে ৷ তারপর একে একে পুলিশের জালে সেইসব কীর্তিমান ৷ কী ঘটেছিল সেদিন ?

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট

By

Published : Jul 13, 2021, 5:29 PM IST

আসানসোল, 13 জুলাই : মাত্র কয়েক সেকেন্ডে 60 লাখ টাকার ভোজ্যতেলের ট্যাঙ্কার সাফ । পরে প্রমাণ না রাখতে ট্যাঙ্কারটি কেটে পিস পিস করে কেটে ফেলা । এই গোটা ঘটনার তদন্তে নেমে আন্তঃরাজ্য ভোজ্যতেল পাচারকারী চক্রের সন্ধান পেল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ।

ঘটনার সূত্রপাত 4 মে । আসানসোল উত্তর থানা এলাকার 2 নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে একটি ভোজ্যতেল বোঝাই ট্যাঙ্কার লুট হয়ে যায় । 10 মে এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয় থানায় । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, রাজস্থান থেকে একটি ভোজ্যতেলের ট্যাঙ্কার বাঁকুড়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু আসানসোল উত্তর থানা এলাকায় আসার পরই হঠাৎ ট্যাঙ্কারটি নিরুদ্দেশ হয়ে যায় । চালকের ফোন ট্র্যাক করেও কোনও সন্ধান মেলেনি । পরে চালক ও খালাসিকে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হয় ।

4 মে ট্যাঙ্কার লুট হলেও, সুস্থ হওয়ার পরেই চালক ও খালাসি 10 মে আসানসোল উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । তাঁদের কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে, 2 নম্বর জাতীয় সড়কে দুষ্কৃতীরা ভোজ্যতেলের ট্যাঙ্কারটি থামিয়ে চালক খালাসিকে বলপূর্বক ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ট্যাঙ্কার লুট করে পালায় । গোটা ঘটনায় ঘটেছে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ৷ প্রায় 60 লাখ টাকার ভোজ্যতেল বোঝাই করা ছিল ওই ট্যাঙ্কারে । অভিযোগে এমনই জানিয়েছেন ট্যাঙ্কারের চালক ও খালাসি ৷ অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ঘটনার তদন্তে নামে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ ।

আরও পড়ুন :ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাফ করা জামতাড়া গ্যাংয়ের চার পান্ডা গ্রেফতার আসানসোলে

এই ঘটনায় হাওড়া থেকে ইমরান খান এবং বসন্ত জয়সওয়াল নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ জানতে পারে ভোজ্যতেলের পাচারকারী হিসেবে অভিযুক্ত হলেও এই ঘটনায় তারা জড়িত নয় । তারা আলাদা চক্রে কাজ করে । কিন্তু তাদের সঙ্গে কথাবার্তায় এই ঘটনার সূত্র খুঁজে পায় পুলিশ ।

এরপরই অসমের বাসিন্দা ও এই ঘটনার 'রিসিভার' মনজিৎ সিং সিন্ধুকে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ । তার কাছে পুলিশ জানতে পারে খিদিরপুরের কাছে একটি গ্যারেজে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়েছে ওই ট্যাঙ্কারটি । এরপর গ্রেফতার করা হয় সংশ্লিষ্ট গ্যারেজের মালিককেও ৷ তবে ভোজ্যতেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি ।

তদন্তে নেমে আন্তঃরাজ্য ভোজ্যতেল পাচারকারী চক্রের পর্দাফাঁস পুলিশের

এদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মেটিয়াবুরুজ থেকে এই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত কমলজিৎ সিং খান্ডেলওয়াল ওরফে পাপু সর্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশ । এরপর একে একে গ্রেফতার হয় নিজামুদ্দিন খান ও আজাদ নামে দুই অভিযুক্ত ।

আরও পড়ুন :লরি ছিনতাইয়ের অভিযোগে ধৃত চার, সিআইডি হেফাজতে অভিযুক্তরা

জেরায় জানা গিয়েছে, ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত কমলজিৎ সিংয়ের বাড়ি অমৃতসরে । নিজামুদ্দিন হাওড়া ও আজাদ মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা । যদিও এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত মতলুব খানকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ ।

গোটা ঘটনার বিষয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি সৌমিক সেনগুপ্ত জানান, এটি একটি আন্তঃরাজ্য ভোজ্যতেল পাচারকারী চক্র । এরা মূলত জাতীয় সড়ক থেকে ভোজ্যতেল-সহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যসামগ্রীর গাড়ি লুট করে । ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার ও অসমে এরা অপারেশন চালায় । প্রচুর সিসিটিভি থাকায় এ রাজ্যে লুট করার প্রবণতা ছিল না দুষ্কৃতীদের । কিন্তু যেহেতু ঝাড়খণ্ডে লকডাউন চলছে সে কারণে পিছু ধাওয়া করলেও ট্যাঙ্কারটি লুট করা সম্ভব হয়নি । শেষে আসানসোল উত্তর থানা এলাকায় এসে দুষ্কৃতীরা ট্যাঙ্কারটি লুট করতে সক্ষম হয় ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাচারকারী চক্রের দুষ্কৃতীরা ধরা পড়লেও, ট্যাঙ্কারটি সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ । উদ্ধার হয়নি 60 লাখ টাকার ভোজ্যতেল ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details