পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে", চিন্তন শিবিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের দরবারে রক্তাক্ত RSS কর্মী - স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শিপ্রা সরকার

দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের ভিতরে চলছিল চিন্তন শিবির । হঠাৎই রক্তাক্ত অবস্থায় দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের কাছে এসে দাঁড়ান এক যুবক । শীর্ষ নেতাদের কাছে বর্তমান হিংসার কথা তুলে ধরেন ৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷

ফাইল ফোটো

By

Published : Aug 11, 2019, 5:43 AM IST

Updated : Aug 11, 2019, 7:26 AM IST

দুর্গাপুর, 11 অগাস্ট : রাত প্রায় আটটা । দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের ভিতরে চলছে চিন্তন শিবির । উপস্থিত শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন, সুরেশ পূজারি, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতো কেন্দ্রীয় নেতারা । ছিলেন দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়রাও । আলোচনা চলছে সংগঠন নিয়ে । মার খেয়েও কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে, কর্মীদের পাশে থাকতে হবে তা রাজ্য নেতাদের শেখাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা । বাইরে তখন স্থানীয় নেতা, কর্মীদের ভিড় । হঠাৎই রক্তাক্ত অবস্থায় দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের কাছে এসে দাঁড়ালেন এক যুবক । মাথায় গামছা বেঁধে রক্ত আটকানোর চেষ্টা হয়েছে । থামেনি । তাঁকে দেখে চমকে যান সকলে । স্থানীয় এক নেতা দৌড় দিলেন সিটিসেন্টারের ভিতর । জানালেন, দলেরই এক কর্মী তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত । ফেটেছে মাথা । রক্তাক্ত অবস্থায় বাইরে দাঁড়িয়ে । শুনলেন নেতারা । বেরিয়ে এলেন সায়ন্তন বসু । ওই কর্মীর সঙ্গে একান্তে কথা বললেন । পাঠিয়ে দিলেন হাসপাতালে । কিছুটা হেঁটে পরে অটো চেপে হাসপাতাল গেলেন তিনি ।

নীতীশ নায়েক । বয়স 26 । বাড়ি কমলপুর । সিটিসেন্টার থেকে কিছুটা দূরে । তিনি আবার স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিখিল নায়েকের ভাইপো । রাতে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান । কী হয়েছে, জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, "তৃণমূল কর্মীরা আমাকে মেরেছে । আরও 6-7 জনকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ।" কিন্তু, কেন ? নীতীশ বলেন, "আমি আগে তৃণমূল করতাম । কিন্তু, মমতা ব্যানার্জির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে RSS-এ যোগ দিই । BJP-র হয়েও কাজ করি । সেইসঙ্গে কমলপুরে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাই । তৃণমূল নেতারা বিশেষ করে আমার কাকা এতে ক্ষুব্ধ । উনি দলবল নিয়ে এটা দখল করতে আসেন । আমরা শুনিনি । তাই, মেরে মাথা ফাটিয়ে দেন ।" রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে না গিয়ে সিটিসেন্টারের সামনে চলে আসেন নীতীশ । চেয়েছিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পরিস্থিতির কথা জানাবেন । বলবেন, দুষ্কৃতীদের হাতে কীভাবে নিগৃহীত হতে হচ্ছে । পারেননি । সায়ন্তন বসু তাঁর কথা একপ্রস্থ শুনে শিবিরমুখো হন ।

আক্রান্ত নীতীশ নায়েক

শিবির শেষে দলীয় কর্মীর আক্রান্ত হওয়ার খবর 'শুনে' উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট জেলা BJP সভাপতি লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের চোখে-মুখে । তিনি বলেন, "আমাদের ছয়-সাতজন কর্মী আক্রান্ত । এভাবে রোজ রোজ হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল । পুলিশও কিছু করছে না ।" শিবির ছেড়ে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সায়ন্তন বসু । বলেন, "পুলিশ নপুংসক । পুলিশের সামনেই আমাদের কর্মীকে মারা হল । আমরা রোজ প্রতিবাদ করছি । ফের প্রতিবাদে নামব । রাজ্যে আইনের শাসন বলে কিছু নেই । গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে । জেলায় জেলায় তৃণমূলের অত্যাচার বাড়ছে । আমরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করবই ।" কথা শেষ করেই সায়ন্তনের গাড়ি ধোঁয়া উড়িয়ে বেরিয়ে গেল ।

চিন্তন শিবির শেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন সায়ন্তন

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর (1 নম্বর ওয়ার্ড) শিপ্রা সরকার বলেন, "কমলপুরে BJP কর্মীরা মদ খেয়ে গালিগালাজ করছিল । প্রতিবাদ করতেই আমাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ হয় । দু-তিনজন জখম । আর ওরা নিজেরা নিজেদের মাথা ফাটিয়ে এখন আমাদের নামে বদনাম করছে ।"

সংঘর্ষের ঘটনায় কমলপুরের বাসিন্দারা দুষছেন নেতা-নেত্রীদেরই । তাঁদের কথায়, কর্মীরা মার খায় । নেতারা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । কই, কেউ তো রক্তাক্ত কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন না । একবার ফিরেও তাকালেন না কেন্দ্রীয় নেতারা । মনে হয় তাঁরা কর্মীদের নিয়ে গভীরভাবে 'চিন্তিত' ছিলেন !

Last Updated : Aug 11, 2019, 7:26 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details