আসানসোল, 23 ডিসেম্বর:শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যায় । বদলে যায় সময়কাল, বেশভূষা । বদলায় আচার-ব্যবহার, খাবার, সংস্কৃতি । কিন্তু জানলে আশ্চর্য হবেন ৷ 1800 শতাব্দীর স্কটিশ কেক আজও আসানসোলের বাজার মাতিয়ে রেখেছে । ইতিহাস ও নস্টালজিয়াকে সঙ্গে রাখতে আধুনিক কেক যতই বাজারে আসুক, প্রাচীন ডুন্ডি কেকের (Dundi Cakes in Asansol) বিক্রি আজও আকাশছোঁয়া আসানসোলের বাজারে । হ্যাঁ, হয়তো স্বাদ বদলেছে, কেক তৈরির উপকরণ বদলেছে । কিন্তু ব্রিটিশ সময়কালের সেই কেক আজও আইকনিক আসানসোলে ।
স্কটল্যান্ডের ডুন্ডি নামে একটি জায়গা আছে । যেখানে এই কেকের প্রচলন । স্কটল্যান্ডের রানি মেরির (Scottish queen Mary) স্মৃতিরক্ষার্থে ও তাঁর সম্মানেই এই ডুন্ডি কেক তৈরি শুরু হয় । যা স্কটিশ সাহেবদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে ওঠে । এই কেকের মূল উপাদান হিসেবে মেশানো হত স্কটিশ মল্ট হুইস্কি । এছাড়াও আমন্ড বাদাম, কালো ও সবুজ কিশমিশ অন্যান্য ফ্রুটসও থাকত । মুখে লেগে থাকার মতো ছিল সেই ডুন্ডি কেকের স্বাদ ।
1700 দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই আসানসোলে (Asansol News) শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে যায় । 1757 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল শুরুর মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয় । কয়লাক্ষেত্রের প্রসারের জন্যই রেল-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয় । 1855 সালের 3 ফেব্রুয়ারি হাওড়া স্টেশন থেকে রেলপথ রানিগঞ্জ অবধি সম্প্রসারিত হয় । 1863 সালে রেলপথ আসানসোল পর্যন্ত প্রসারিত হয় । ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের হাত ধরেই আসানসোলে শুরু হয় প্রথম আধুনিক জীবনযাত্রা ।
রেল এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় বহু ইউরোপীয় চাকরি সূত্রে বসবাস শুরু করেন আসানসোলে । ব্রিটিশ বা ইংরেজ এবং স্কটিশ সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে বহু আর্মেনিয়ান এবং মিশনারিদের আগমন ঘটতে থাকে আসানসোলে । সেই সময় থেকেই সেখানে বড়দিনের উৎসব পালন শুরু হয় । কিন্তু স্কটিশ সাহেবরা হাপিত্যেশ করতেন, তাদের প্রিয় ডুন্ডি কেক খেতে না পারার জন্য । আর সাহেবদের সেই স্বাদ-বঞ্চনার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হন তাঁদের বাড়ির গিন্নিরাই ।