দুর্গাপুর, 11 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার এক প্রাচীন রীতি রয়েছে । শোনা যায়, কৈলাসে গিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবকে সপরিবারে দেবী দুর্গার কৈলাসে আসার খবর দেয় এই নীলকণ্ঠ পাখি । এমন প্রাচীন লোকগাথাও লিখিত যে সেই নীলকণ্ঠ পাখিকে দেবাদিদেব মহাদেবের দোসর বলাও হয় । কারণ শিবের আরও এক নাম নীলকণ্ঠ । এই পাখিকে দেবী অন্নপূর্ণা বা লক্ষ্মীর সবচেয়ে প্রিয় পাখি বলে বিবেচিত করা হয়েছে ।
একসময় বাংলার নাগরিক জীবনে বাড়ির পাশাপাশি নীলকণ্ঠ পাখির উপস্থিতিকে শুভ লক্ষণ বলে বিবেচিত করা হত । এই পাখিকে কৃষকবন্ধু হিসাবেও বাংলার কৃষককুল অভিহিত করে থাকেন । কারণ এই পাখি ফসলের ক্ষতিকারক বিষাক্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল নষ্টের হাত থেকে কৃষকদের মুক্তি দেয় ৷ কিন্তু কালের প্রবাহে নীলকণ্ঠ পাখির সংখ্যা একলাফে কমে যাওয়ায় ধান চাষের জমিতে বেড়েছে ফসলের ক্ষতিকারক গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং, উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রজাতির পোকা ।
মূলত দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, দুই বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই সমস্ত জেলাগুলিতে একসময় নীলকণ্ঠ পাখির আধিপত্য ছিল । রাজ্যে 13টি সংগঠনের প্রায় 28 হাজার পক্ষী বিশারদ বিভিন্ন পাখিদের উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । আর সেই রিপোর্ট দেখার পর রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, উত্তরবঙ্গে অতি দ্রুত নীলকণ্ঠ পাখির প্রজননের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা করা হবে বনমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ।
আমন ধান রোপণের মরশুমে বৃষ্টির আকাল দেখা দিয়েছিল । কোথাও সোলার সাবমার্সিবলের মাধ্যমে আবার কোথাও বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবলের মাধ্যমে সেচ করে হয়েছে ধান চাষ । তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক জমি ফাঁকায় পড়ে রয়েছে । যেটুকু জমিতে ধান বীজ রোপণ করা হয়েছে তারও ফলন নিয়ে চিন্তায় পড়েছে চাষিরা । কারণ ধানের শিষ বেরোনোর আগেই গঙ্গা ফড়িং, মাজরা পোকা, ঘাস ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং ও উড়চুঙ্গা-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । এক সময় চাষের জমিতে এইসব পোকাদের ধ্বংস করতে দেখা যেত কৃষক বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখিকে । কিন্তু বর্তমানে কমে গিয়েছে এই পাখির আনাগোনা । জমিতে অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার আর কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পাখিরা কম আসছে বলেও অনেকের মত ।