দুর্গাপুর, 22 জুলাই : বয়স মেরেকেটে 12 থেকে 15 ৷ কারোর হয়তো একটু বেশি ৷ চোখ লাল ৷ উসকো-খুসকো চুল ৷ বেশিরভাগ সময় একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে ৷ দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে বসে নেশা করছে 20-25 জন ছেলে-মেয়ে ৷
দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরেই থাকে কয়েকটি পরিবার ৷ মূলত দূরপাল্লার ট্রেনে ও স্টেশন চত্বরের দোকানে ঝাঁট দিয়ে সামান্য কিছু আয় হয় ৷ আর তা দিয়েই চলে দেদার নেশা ৷ স্টেশনের আশপাশ থেকেই জোগাড় করা হয় ডেনড্রাইট আঠা ৷ সেখানে না মিললে পানাগড় থেকে নিয়ে আসা হয় ৷ প্রকাশ্যেই চলে নেশা ৷ পলিথিন ব্যাগ বা কাপড়ের টুকরোর মধ্যে রাখা থাকে আঠা ৷ শুধু দুর্গাপুর স্টেশনের কিশোর-কিশোরীরা নয়, নেশার টানে আসানসোল স্টেশন থেকেও আসে একদল ছেলেমেয়ে ৷ একেবারেই লুকোছাপার বিষয় নেই ৷ বরং স্টেশন চত্বরে খোলাখুলি নেশা চালায় ৷ ক্যামেরা দেখেও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই ।
এরা এতটাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে ডেনড্রাইটের আঠা ছাড়া চলে না ৷ আর উপার্জন যেহেতু বেশি নয় তাই মাঝেমধ্যেই টাকার টান পড়ে ৷ নেশার জন্য অপরাধ জগতে পা বাড়ায় ৷ কিন্তু, স্টেশন চত্বরে এরকম খোলাখুলি নেশা করছে তা কীভাবে রেল কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে? স্থানীয়দের বক্তব্য, মাঝেমধ্যে পুলিশ আসে ৷ ধমক দেয় ৷ কিন্তু, পুলিশ গেলে যে কে সেই ৷ আবার শুরু হয় নেশা ৷
বিষয়টি নিয়ে আসাসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের DCP (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তিনি বলেন, "আমরা বিষয়টি শুনলাম ৷ পুলিশ পাঠাচ্ছি ৷ সরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাদের সুস্থজীবনে ফিরিয়ে আনা হবে ৷" আর আসানসোল মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের দপ্তরের বক্তব্য, "রেল পুলিশকে সতর্ক করা হবে ৷ মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয় ৷ তাদের বোঝানো হয় ৷ এখন থেকে অভিযানের বিষয়ে নিশ্চিত করা হচ্ছে ৷"
কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবশ্য উদ্যোগী হয়ে নেশামুক্তির চেষ্টা করে ৷ কিন্তু, তা নিয়মিত নয় ৷ কিশোর-কিশোরীদের নেশামুক্তি সেন্টারে নিয়ে যান ৷ কয়েকজন নেশা ছেড়ে দেয় ৷ এরকমই একজন বছর 15-র রাহুল ৷ প্রায় মাস সাতেক ধরে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত ৷ কয়েকজনের উদ্যোগে দিন পাঁচেক আগেই সেই জাল থেকে মুক্ত হয়েছে ৷ আপাতত সুস্থ রয়েছে সে ৷ একই বক্তব্য অপর এক কিশোরের ৷ নেশার জাল থেকে বেরিয়ে জল বিক্রি করে সুস্থভাবে জীবনযাপন করছে ৷ কিন্তু, তাঁদের মতো সবাই ভাগ্যবান না ৷ আর তাই রাজু, বিলে, গোপী, বিলাসদের জীবন আপাতত নেশার কারাগারে রুদ্ধ ৷ যতদিন না সেখান থেকে মুক্ত হচ্ছে ততদিন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।