তালাবন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার পড়ুয়ার দেহ দুর্গাপুর, 25 অগস্ট: ফের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার কলেজ পড়ুয়ার পচা গলা ঝুলন্ত দেহ ৷ দুর্গাপুরের বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ার কলেজের হস্টেল থেকে ছাত্রের দেহ উদ্ধার । বৃহস্পতিবার বিকেলে কলেজ হস্টেলের রুম থেকে দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার পুলিশ পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তে ৷ দুর্গাপুরের ফুলঝোড়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ঘটনা ৷ জানা গিয়েছে, মৃত কলেজ পড়ুয়া তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন ৷ সৌরভের রহস্যমৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিবার-পরিজন ৷ বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা ৷ প্রশ্ন করা হচ্ছে সৌরভের সহপাঠীদেরও ৷
মৃত ছাত্রের বাবা সুরিন্দর রায় অভিযোগ করে বলেন, "আমরা বুধবার দুর্গাপুরে চলে এসেছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টা জানার পরেও যখন সৌরভের মৃতদেহ উদ্ধার হয়, আমাদেরকে জানাননি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা সৌরভের দেহ দেখতে পাইনি। কোনও কিছু গোপন করা হচ্ছে আমাদের কাছে। তবে পুলিশ যথেষ্ট সহায়তা করেছে আমাদের। আত্মহত্যা আমার ছেলে করতে পারে না। আমরা অতি সাধারণ পরিবারের। খুব কষ্টে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম আমার ছেলেকে। ওর উপর আমাদের অনেক আশা ছিল। ছেলের মৃত্যুর পেছনে রহস্য রয়েছে।"
সৌরভের পরিবার আসলে বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা ৷ ঘটনার কথা জানতে পেরে বুধবারই তাঁরা চলে আসেন দুর্গাপুরে ৷ তাঁদের সঙ্গে আসেন ভাগলপুরের কেহেল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ব্রজেস পাসওয়ান ৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, "আত্মহত্যা নয়, খুন হয়েছেন সৌরভ। কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এখনও পর্যন্ত সৌরভের দেহ দেখতে দেননি ৷ পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করলে সমস্ত সত্য বেরিয়ে আসবে।"
ঘটনায় এদিন কলেজের ডিন জানিয়েছেন, পড়ুয়ার দেহ প্রথম দেখতে পান তাঁদের কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ৷ তিনিই বাকিদের খবর দেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা এমন ঘটনা জানার পরেই পুলিশকে খবর দিই ৷ বাড়ির লোককে খবর দিইনি ৷ কারণ পুলিশ জানিয়েছিল, তারা পরিবারকে জানাবে ৷ যে ঘর থেকে ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেটা তালাবন্ধ ছিল ৷ ওখানে সংস্কারের কাজ চলছিল ৷ ইলেকট্রিসিয়ানরা কাজ করতে গেলে দরজার বাইরে থেকে দুর্গন্ধ পান ৷ তারপর তা খুললে সৌরভের পচা গলা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷ আমরাই অবাক হয়ে যাচ্ছি, কীকরে বন্ধ ঘর থেকে দেহ উদ্ধার হল ৷"
ঘটনায় পুলিশ আপাতত তাকিয়ে ময়নাতদন্তে রিপোর্টের দিকে। তবে সৌরভ কুমারের মৃত্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নচিহ্ন এসে দাঁড়িয়েছে। হস্টেলের চতুর্থ তলে সংস্কারের কাজ চলছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের মতে, ফাঁকা ঘরগুলিতে তালা লাগানো ছিল। তাহলে সৌরভ কীভাবে চারতলার ওই ঘরের ভেতরে ঢুকে আত্মহত্যা করল? সেকি তাহলে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকেছিল? যদি তাই হয়, তাহলে ঘরে তালা ভাঙার অস্তিত্ব থাকত ৷ কিন্তু এখানে ঘর ছিল তালাবন্ধ ৷ তাহলে কি সংস্কারের সুযোগ নিয়ে কেউ তাঁকে মেরে ওই ঘরে ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন উঠেছে ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টসকে তলব লালবাজারের, ডাক রেজিস্ট্রারকেও
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের 21 তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিল দুর্গাপুরের ফুলঝোড়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স ও ডিজাইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভ কুমার (23)। গতকালই নিউ টাউনশিপ থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেছিল পরিবার। বৃহস্পতিবার বিকালে কলেজের ছাত্রাবাসের চতুর্থ তলে একটি ঘরে সৌরভের পচা গলা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে যায় নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশের পাশাপাশি ফরেনসিক বিভাগের আধিকারিকরাও। দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷