পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মায়ের কষ্ট দূর করতে কুয়ো খুঁড়ছে মেয়ে ! - মায়েক কষ্ট দূর করতে কুয়ো খুঁড়ল মেয়ে

রানিগঞ্জের বক্তারনগর আদিবাসী পাড়ায় বাড়ি ববিতার ৷ মায়ের জল আনার কষ্ট দূর করতে ঘরে কুয়ো খুঁড়ছে সে ৷

ববিতা সোরেন
ববিতা সোরেন

By

Published : Jun 27, 2020, 6:27 PM IST

Updated : Jun 27, 2020, 8:03 PM IST

রানিগঞ্জ, 27 জুন : গ্রামের শেষপ্রান্তে বাড়ি ৷ আশপাশে কোনও নলকূপ নেই ৷ প্রখর রোদে, বৃষ্টিতে তাই মায়েরও কোনও ক্লান্তি নেই ৷ জল আনতে প্রতিদিন প্রায় হাফ কিলোমিটার হাঁটতে হয় তাঁকে ৷ দাঁড়াতে হয় লম্বা লাইনে ৷ এভাবেই বছরের পর বছর কেটে গেছে ৷ কিন্তু, এবার বোধহয় সময় উলটো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে ৷ কারণ মায়ের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করতে এগিয়ে এসেছে মেয়ে ৷ মায়ের পায়ে সে আর দীর্ঘ পথ পেরোনোর যন্ত্রণার ছাপ দেখতে চায় না ৷ তাই ঘরেই কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে ৷ ঝুড়ি কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছে মায়ের কষ্ট দূর করার অভিযানে ৷

রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বক্তারনগর আদিবাসী পাড়া ৷ সেখানেই মা ও বোনকে নিয়ে থাকে ববিতা সোরেন ৷ প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিকূলতা পেরিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে 2018 সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে MA পাশ করেছে ৷ বর্তমানে B.Ed করছে ৷ লকডাউনে স্কুল-কলেজ বন্ধ ৷ তাই বাড়ি ফিরেছে ৷ ববিতার স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন মা-বোনকে দেখবে ৷ কিন্তু স্বপ্ন অনেক দূর ৷ বাড়ি ফিরে কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন ববিতা ৷ সেই কবে ছোটোবেলায় মাকে দূর থেকে জল আনতে দেখত ৷ আজও পরিস্থিতি বদলায়নি ৷ কষ্ট কমেনি ৷ ক্লান্তি কমেনি ৷ শুধু বয়স বেড়েছে মায়ের ৷ তাই আর স্থির থাকতে পারেনি মেয়ে ৷ অগত্যা ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে জলের সন্ধানে মাটি খুঁড়তে শুরু করেছে ৷ লক্ষ্য মায়ের হাতের কাছে জল এনে দেওয়া ৷ রানিগঞ্জের এই মেয়ের লড়াই "মাঝি" সিনেমার চিত্রনাট্যের কথা মনে করিয়ে দেয় ৷ প্রেমিকাকে হারিয়ে যে পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিল ৷

18 ফুট পর্যন্ত কুয়ো খুঁড়ে ফেলেছে ববিতা

অবশ্য মেয়ের এই কুয়ো খোঁড়ার পদক্ষেপের জন্য অনেকটাই পরিস্থিতি দায়ি ৷ ববিতার মা মিনা সোরেন বলেন, "আমাকে বহু দূর থেকে জল আনতে দেখে, মেয়ে বলল কুয়ো খুঁড়বে । টাকা পয়সা নেই ৷ তাই লোকজন দিয়ে কাজ করতে পারিনি । কারণ, টাকা শেষ হলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাব কী করে ? তার উপর লকডাউনে স্বামী ও ছেলের কাজ নেই ৷ পঞ্চায়েতে গেছিলাম ৷ সেখানে বলল কুয়ো খুঁড়তে 5000 টাকা লাগবে । জল আনতে খুব কষ্ট হয় ৷ হাত-পা ব্যথা করে ৷ সব শুনে মেয়েই কাজ শুরু করে দেয় ৷ "এবিষয়ে বল্লভপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিধান মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে ৷ কিন্তু, কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ।

মায়ের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে রানিগঞ্জের ববিতা

তবে কোনও সাহায্য বা প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় বসে নেই ববিতা ৷ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ওই চোখগুলো যে হার মানবে না, তা বোঝা যায় ৷ ইতিমধ্যেই 18 ফুট মাটি খুঁড়ে ফেলেছে ববিতা । বলে, "কুয়ো তৈরির একটাই কারণ, মা ৷ গ্রামে ঢোকার মুখে টিউবওয়েল ৷ আমরা একেবারে শেষপ্রান্তে ৷ তাই জল আনতে খুব সমস্যা হয়৷ এবারও বাড়ি ফিরে দেখলাম একই সমস্যা ৷ তাই ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করি ৷ গরমে খুব কষ্ট হচ্ছিল ৷ প্রথম প্রথম কাঁকর-বোল্ডার গাঁইতি দিয়ে কেটে সরিয়েছি ৷ বর্ষার অপেক্ষায় ছিলাম ৷ এখন পুরো দমে কাজ শুরু করেছি ৷ প্রায় 18 ফুট খুঁড়ে ফেলেছি ৷ আরও কয়েক ফুট খুঁড়তে হবে ৷ তবেই ভালো জল পাওয়া যাবে ৷ মা-বোনও আমাকে সাহায্য করছে ৷"

Last Updated : Jun 27, 2020, 8:03 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details