রানিগঞ্জ, 27 জুন : গ্রামের শেষপ্রান্তে বাড়ি ৷ আশপাশে কোনও নলকূপ নেই ৷ প্রখর রোদে, বৃষ্টিতে তাই মায়েরও কোনও ক্লান্তি নেই ৷ জল আনতে প্রতিদিন প্রায় হাফ কিলোমিটার হাঁটতে হয় তাঁকে ৷ দাঁড়াতে হয় লম্বা লাইনে ৷ এভাবেই বছরের পর বছর কেটে গেছে ৷ কিন্তু, এবার বোধহয় সময় উলটো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে ৷ কারণ মায়ের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করতে এগিয়ে এসেছে মেয়ে ৷ মায়ের পায়ে সে আর দীর্ঘ পথ পেরোনোর যন্ত্রণার ছাপ দেখতে চায় না ৷ তাই ঘরেই কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে ৷ ঝুড়ি কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছে মায়ের কষ্ট দূর করার অভিযানে ৷
রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বক্তারনগর আদিবাসী পাড়া ৷ সেখানেই মা ও বোনকে নিয়ে থাকে ববিতা সোরেন ৷ প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিকূলতা পেরিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে 2018 সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে MA পাশ করেছে ৷ বর্তমানে B.Ed করছে ৷ লকডাউনে স্কুল-কলেজ বন্ধ ৷ তাই বাড়ি ফিরেছে ৷ ববিতার স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন মা-বোনকে দেখবে ৷ কিন্তু স্বপ্ন অনেক দূর ৷ বাড়ি ফিরে কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন ববিতা ৷ সেই কবে ছোটোবেলায় মাকে দূর থেকে জল আনতে দেখত ৷ আজও পরিস্থিতি বদলায়নি ৷ কষ্ট কমেনি ৷ ক্লান্তি কমেনি ৷ শুধু বয়স বেড়েছে মায়ের ৷ তাই আর স্থির থাকতে পারেনি মেয়ে ৷ অগত্যা ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে জলের সন্ধানে মাটি খুঁড়তে শুরু করেছে ৷ লক্ষ্য মায়ের হাতের কাছে জল এনে দেওয়া ৷ রানিগঞ্জের এই মেয়ের লড়াই "মাঝি" সিনেমার চিত্রনাট্যের কথা মনে করিয়ে দেয় ৷ প্রেমিকাকে হারিয়ে যে পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিল ৷