আসানসোলের কুলটিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধির মূর্তি সরানো নিয়ে তরজা আসানসোল, 10 মে: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং রাজীব গান্ধির মূর্তি সরানোর ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হল ৷ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে কুলটির সাঁকতোড়িয়া এলাকায় এ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ছে ৷ অভিযোগ, এলাকার বিজেপি নেতা অভিজিৎ আচার্য ওরফে বাপ্পা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের দু'টি মূর্তি নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরাতে চেয়েছিলেন ৷ সেই খবর পেয়ে কংগ্রেস নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন ৷ বচসা বাধে বিরোধী দুই পক্ষের মধ্যে ৷ পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ৷ তাদের হস্তক্ষেপে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলটির সাঁকতোড়িয়ার বিজেপি নেতা অভিজিৎ আচার্য ওরফে বাপ্পা একসময় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন ৷ কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ৷ পরে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ এরপর আসানসোলের বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির হাত ধরে তৃণমূল থেকে পদ্ম শিবিরে চলে যান ৷ বাপ্পা এলাকায় জিতেন্দ্র-অনুগামী বলেই পরিচিত ৷
অভিজিৎ আচার্য যখন কংগ্রেসে থাকাকালীন তাঁর উদ্যোগে সাঁকতোড়িয়ার হোসেনিয়া মোড়ের কাছে একটি দলীয় অফিস তৈরি হয় ৷ কংগ্রেস কার্যালয়ের পাশে দেশের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং রাজীব গান্ধির মূর্তি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ পরে অভিজিৎ আচার্য দল বদলে প্রথমে তৃণমূল এবং তারপর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই কার্যালয়েরও রং বদলায় ৷ রাজনৈতিক সমীকরণে অভিজিৎ আচার্যের তৈরি সেই কংগ্রেস কার্যালয়টি এখন বিজেপির কার্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে ৷
এই বিজেপি কার্যালয়ের পাশে প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রীর মূর্তি রাখা ছিল ৷ তার পাশেই উড়ত বিজেপির পতাকা ৷ গেরুয়া শিবিরের পতাকার নীচে কংগ্রেস জমানার দুই প্রধানমন্ত্রীর মূর্তি রাখা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ মঙ্গলবার বিকেলে এই দু'টি মূর্তি সরিয়ে দিতে চান অভিজিৎ আচার্য ৷ তিনি জায়গাটিতে ভাঙচুর করেন ৷ আর এ থেকে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ বিজেপি নেতা বাপ্পার দাবি, "কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মূর্তিগুলিকে সরানো হয়েছে ৷ মূর্তিগুলিকে ভাঙা হয়নি ৷ বিজেপি পতাকার তলায় ইন্দিরা গান্ধি এবং রাজীব গান্ধির মূর্তি অশোভন লাগছিল ৷ তাই কারণেই কংগ্রেসকে বলা হয়েছে তারা যদি মূর্তিগুলি নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও স্থাপন করুক ৷"
বিকেলের পর থেকে এ নিয়ে এলাকায় গুজব ছড়ায়, অভিজিৎ আচার্য দেশের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রীর মূর্তি ভেঙে দিয়েছেন ৷ এতে কংগ্রেসকর্মীরা সেখানে পৌঁছন ৷ বচসা থেকে হাতাহাতিতে পৌঁছনোর উপক্রম হয়েছিল ৷ তবে যথাসময়ে পুলিশি তৎপরতায় অবস্থা সামাল দেওয়া হয় ৷ যদিও কুলটি ব্লকের কংগ্রেসের সভাপতি চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি (বাপ্পা) একটি ভুল কাজ করে ফেলেছিলেন ৷ তিনি সাফাই দেন ওই মূর্তিগুলি সংস্কারের প্রয়োজন ছিল বলেই তিনি সরিয়ে দিয়েছিলেন ৷
দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মূর্তি সরানোর ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ৷ তিনি জানান, ইন্দিরা গান্ধি এবং রাজীব গান্ধি দু'জনেই ভারতরত্ন ৷ তাঁদের মূর্তি এভাবে সরিয়ে ফেলা যায় না ৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বলেন, "আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ৷ আমাদের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বিষয়টির উপর নজর রাখছেন ।" মূর্তিগুলিকে ওই স্থানে ফের স্থাপন করা হবে নাকি অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে, তা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয় ৷ তবে এই মূর্তি সরানো নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে গোটা কুলটি এলাকায় ।
আরও পড়ুন: শাহের থেকে পুরনো পাঁচ প্রশ্নের জবাব চাইল তৃণমূল