দুর্গাপুর, 16 জুন : ঘরের সমস্ত জিনিস হিসেব করে রাখা৷ কত পা হাঁটলে কোথায় কোন জিনিসটা মনে রাখতে হয় ৷ মাথায় রাখতে হয় কত দূর হাত বাড়ালে কোন জিনিসের নাগাল পাওয়া যাবে ৷ স্পর্শ দিয়ে পড়াশোনা । এভাবেই প্রতিবন্ধকতার সাথে, দারিদ্রতার সাথে, সুস্থ মানুষের সাথে টেক্কা দিয়ে প্রতিযোগিতায় লড়ছেন জন্মান্ধ গণেশ, পূজা ও পিঙ্কি ৷
গণেশ কলেজ পাশ, পূজা ও পিঙ্কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ৷ কোরোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে যখন লকডাউন তখন ওদের লড়াইও বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ ৷ এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাতগুলোও সরে গিয়েছে দূরে ৷ তবুও ওরা ভেঙে পড়েনি ৷ "আমরা করব জয়, নিশ্চয়" গানটিকে জীবনের মূলমন্ত্র করে ওরা এগিয়ে চলেছে স্বাবলম্বীর পথে ৷ ওদের এখন একটাই আবেদন, একটা চাকরি ৷
দুর্গাপুরের 11 নম্বর ওয়ার্ডের কুড়ুরিয়া ডাঙার বাসিন্দা গণেশ বাউরি । জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন । প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতে গণেশ আজ স্নাতক হয়েছেন । কিন্তু এখানেই শেষ করেননি নিজের পড়াশোনা । চান আরও পড়তে । তিনি চান, তাঁর মতো জন্মান্ধ ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক ৷ সেই প্রচেষ্টাতেই গণেশ নিজের উদ্যোগে নিয়ে আসে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুন এবং পূর্ব বর্ধমানের বলগোনার বাসিন্দা পূজা দাসকে । তাঁদের নিজের প্রচেষ্টাতে গণেশ ইতিহাসে অনার্স পড়ার জন্য দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ভরতি করেন ।
কিন্তু এই তিনজন দৃষ্টিহীন থাকবেন কোথায় ? ঠিক সেই সময় দুর্গাপুর নগর নিগমের 12 নম্বর ওয়ার্ডে শংকরানন্দ ব্রহ্মচারী আনন্দ আশ্রমে এই তিনজন মাথা গোঁজার ঠাঁই পান । কিন্তু তিনজনকে বলে দেওয়া হয় তাঁদের থাকার জন্য কোনওরকম খরচ না লাগলেও তাঁদের খাওয়া দাওয়া নিজেদেরই দেখতে হবে । সেই মতই এই তিনজন আজ থেকে চার বছর আগে এই আশ্রম এসে বসবাস শুরু করেন । অনেক শুভানুধ্যায়ী মানুষ জানতে পারার পর তাঁদের মাঝেমধ্যে সাহায্য করেন । আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের এই তিন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী কঠিন সংগ্রাম করে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ।