দুর্গাপুর, 12 জুন : "সামাজিক দূরত্বকে মানা হচ্ছে । আর কত মানবো ভাই?" এমনটাই শোনা গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির মুখে । বৃহস্পতিবার রীতিমতো জমাটি বাউল গানের আসরে উপস্থিত হয়ে একথা জানালেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে । হাজার হাজার মানুষ গায়ে গা ঠেকিয়ে বসে আছেন বাউল গান শুনতে । আয়োজক দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানা এলাকার গোগলা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি । রাজ্যের শাসক দল সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সামাজিক দূরত্বকে কিভাবে অবজ্ঞা করতে হয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বলে অভিযোগ ।
এই অনুষ্ঠানে পানশিউলি গ্রামের 300টি পরিবার BJP ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন । আর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি, লাউদোহা ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজিৎ মুখোপাধ্যায় সহ প্রথম সারির TMC নেতৃবৃন্দরা । আনলক ওয়ান পর্ব চললেও এখনও পর্যন্ত কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী মুখে মাস্ক পরা জরুরী এবং এক জায়গায় বহু মানুষের সমাগম যাতে না হয় সেই নিষেধাজ্ঞার কথাও জারি রয়েছে । কিন্তু সে সব কিছুকে পাত্তা না দিয়েই দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানা এলাকার গোগলা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির উদ্যোগে ঘেরা জায়গার ভেতরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ।
সামাজিক দূরত্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন আমজনতা । বাউল গায়কের গলায় শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা গানের কলি । বাউল গায়ক তারস্বরে বাউল গান গেয়ে মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ালেন । আর হাজার হাজার মানুষ গায়ে গা ঠেকিয়ে কোরোনা ভীতিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন । বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার নিষেধাজ্ঞাকে ।
জমাটি আসরে সামনের সারিতে আবার শুধুই মহিলাদের ভিড় । অনেকের মুখে মাস্ক টুকুও নেই কিন্তু কিভাবে এই আসরের পুলিশি অনুমোদন মিলল? বিষয়টিকে নিয়ে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, " আমাদের কিছু ভুলের জন্য এই ব্লকের পানশিউলি গ্রামের প্রায় 300 টি পরিবার BJP-তে চলে গিয়েছিল । আজ তারা আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের কাছেই ফিরে এল ।"
BJP-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘড়ুই মন্তব্য করেন, "কয়েকদিন আগে আমরা তিন চারটি গাড়িতে করে আমাদের এক BJP কর্মীকে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মারধর করেছিল বলে তার বাড়িতে তাকে দেখতে যাচ্ছিলাম । ফরিদপুর থানার সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হল, আমাদেরকে মারধর করা হল । পুলিশ দেখতে পাইনি সেই ঘটনা । আজও শাসকদলের যেহেতু অনুষ্ঠান পুলিশ দেখতেই পাইনি ।"
তিনি আরও বলেন, "এটা যদি BJP করত তাহলে মামলা-মোকদ্দমা অনেক কিছুই পুলিশের পক্ষ থেকে করা হত । আসলে জিতেন্দ্র তিওয়ারি, সুজিত মুখোপাধ্যায় লাউদোহা ব্লকে যা খুশি করে বেড়াচ্ছেন । কিন্তু এর প্রতিফল বোঝা যাবে 2021-র ভোট বাক্সে ।" এবিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের DCP (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, "আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি । যদি লকডাউন শিথিলতার আইন অমান্য হয়ে থাকে তাহলে যারা এই ঘটনার উদ্যোক্তা তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে ।"
রাজ্যের শাসক দলের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্ন তুলেছেন কিভাবে পুলিশ এত মানুষের জমায়েত হবে জেনেও তাতে অনুমোদন দিলেন? কারণ এখনও পর্যন্ত সরকারি বিধি নিয়ম অনুযায়ী কুড়ি পঁচিশ জনের বেশি জমায়েত করা যাবেনা । অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা আছে । তাহলে কিভাবে গোগলা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে এই রাজনৈতিক এবং বাউল গানের অনুষ্ঠান হল?