পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Oct 28, 2020, 8:14 PM IST

ETV Bharat / state

"নিরাশায় ডুবে যাওয়া এই নিরালায়...", অসহায় অবস্থা আসানসোলের কিশোর কুমারের

কিশোর কুমারের গান গেয়ে তখন রাতারাতি ফেমাস দুর্গা রানা। আসানসোল সহ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের হার্টথ্রব হয়ে ওঠেন তিনি। দুর্গা রানা মঞ্চে উঠলেই তোলপাড়। তখন পাড়ায় পাড়ায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে অনুষ্ঠান হত। দুর্গা রানার নাম শুনলেই ভরতি হয়ে যেত মাঠ ।

asansol_singer_durga_rana_got_ill_in_lockdown_now_the_singer's_economic_condition_is_not_well
ভাঙা ঘর, অর্ধাহার, অসহায় দিন কাটাচ্ছেন আসানসোলের কিশোর কুমার

আসানসোল, 28 অক্টোবর : লকডাউনে গত আট মাস অনুষ্ঠান বন্ধ। সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করে কোনও মতে সংসার টানছিলেন আসানসোলের ‘কিশোর কুমার’ দুর্গা রানা । কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, পায়ে ফাইলেরিয়ায় গভীর সংক্রমণের কারণে তিনি আজ বিছানায় ৷ বন্ধ হয়েছে চাকরিতে যাওয়াও । বর্তমানে কুলটির ডিসেরগড়ে এক চিলতে ভাঙা ঘরে পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আসানসোলের "কিশোর কুমার" দুর্গা রানা ।


তাঁর গানের যাত্রার শুরু হয়েছিল সাতের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। কিশোরকুমারের গান গেয়ে তখন রাতারাতি ফেমাস দুর্গা রানা। আসানসোল সহ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের হার্টথ্রব হয়ে ওঠেন । দুর্গা রানা মঞ্চে উঠলেই তোলপাড় । তখন পাড়ায় পাড়ায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে অনুষ্ঠান হত । দুর্গা রানার নাম শুনলেই ভরতি হয়ে যেত মাঠ । শীতের রাতেও মাথায় শিশির নিয়ে রাতভর গান শুনত লোকে । এমনকী তাঁর জনপ্রিয়তাও বাড়তে শুরু করে । বাংলা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার এমনকী উত্তরপ্রদেশেও দুর্গার ডাক পড়তে শুরু করে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই। কিন্তু মঞ্চ ছেড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত গায়ক হিসেবে তৈরি করতে সিনেমায় প্লেব্যাক কিংবা সিডি বের করার কথা ভাবেননি কোনওদিন ৷ চেষ্টাও করেননি তিনি । মঞ্চকে আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছিলেন দুর্গা রানা। দিন পালটেছে গানও । কিশোর কুমারের গান গাওয়া দুর্গা রানার অনুষ্ঠান কমতে শুরু করে 2010-র পর থেকেই । তবু এক সময়ের নামী শিল্পী হিসেবে ডাক পেতেন সম্মানের কারণে । বয়সের ভারে গলাও পালটে গিয়েছে তাঁর । একসময় বাধ্য হন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিতে । আসানসোলের কিশোরকুমার হয়ে গেলেন বেসরকারি কারখানার নিরাপত্তারক্ষী । সকালে চাকরি আর রাতে কোনও কোনও দিন অনুষ্ঠান । এই নিয়েই বেশ চলছিল ৷ কিন্তু বাধ সাধল লকডাউন। অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি কাজের জায়গাও নড়বড়ে হয়ে যায় । এরই মাঝে নতুন উপসর্গ, পায়ে বাসা বাঁধল ফাইলেরিয়ার সংক্রমণ । বর্তমানে আর বিশেষ নড়াচড়া করতে পারেন না দুর্গা রানা । জমানো টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছে । চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই । কী হবে ভবিষ্যৎ আসানসোলের কিশোর কুমারের?

আসানসোলের "কিশোর কুমার" দুর্গা রানা

কুলটির ডিসেরগড়ে এক চিলতে ছোট্ট অ্যাসবেস্টস দেওয়া বাড়িতে থাকেন তিনি । বৃষ্টি এলেই ঘর ভেসে যায় । সেখানেই স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে থাকেন দুর্গা রানা । ছেলে ঠিকা সংস্থায় সামান্য কাজ করেন । সেই আয়েই কয়লার উনুনে আজও চাপে ভাতের হাঁড়ি । নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় দুর্গা রানা । বললেন "আমার ভবিষ্যৎ কী হবে নিজেই জানি না। অনেকেই এসেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার, পাশে থাকার ।" সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, আসানসোলের সাংসদও তাঁর মতো একসময় কিশোর কুমারের গান গাইতেন । সাসংদ যদি সহযোগিতা করেন তাহলে ভালো হয় ৷ অভাব থাকলেও স্বামীকে অন্য পেশায় দেখতে চান না দুর্গার স্ত্রী বীণা রানা । বললেন, তিনি চাই স্বামী দুর্গা রানা সুস্থ হয়ে আবার মঞ্চে ফিরে যান । আবার গান করুন । সেটাই তাঁর স্বপ্ন।

দুর্গা রানার স্ত্রী বীণা রানা
কিন্তু পায়ের সংক্রমণের যন্ত্রণায় স্বামীর চিৎকার শুনলেই থমকে যান বীণা দেবী । তাঁর মনেও সংশয় বাসা বাঁধে, আর কি মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাইতে পারবেন দুর্গা রানা ? নাকি হতাশ হয়ে বাড়িতেই গুনগুন করবেন, "নিরাশায় ডুবে যাওয়া এই নিরালায়..."
অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আসানসোলের কিশোর কুমার

ABOUT THE AUTHOR

...view details