আসানসোল, 9 জুন: আসানসোল উত্তরে গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকা। ইসিএলের খনির ছোট ছোট আবাসন। তারই পাশে সার দিয়ে টালির ঘর। পাড়ার মাঝে পুড়ছে কয়লা। দুপুরের গরম কমে যাওয়ার পর পাড়ার মহিলারা বেরিয়ে এসেছে বাইরে বৈকালিক আড্ডায়। আর তারই পাশে একমনে নাচের অধ্যাবসায় করে যাচ্ছে মাস্টার জেডি'র ছাত্রছাত্রীরা। এরা প্রত্যেকেই দিনমজুর শ্রেণীর পরিবারের। কারও বাবা ইঁট ভাটায় কাজ করেন, কারও মা আবার পরিচারিকা। তাঁদের ঘরের ছেলে-মেয়েরাই নিজেদের প্রতিভার জোরে ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায় ৷
পুষ্টিকর খাবার নেই, পরনে ভালো পোশাক নেই, নেই নাচের জন্য কোনও পরিকাঠামো। কিন্তু শুধুমাত্র নাচের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সবরকম ঝা-চকচকে দুনিয়া থেকে দূরে থেকেও লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন নিমেষে ৷ সেই খবর পেয়ে তাঁদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু।
আসানসোলের গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকার বাসিন্দা অজয় তুড়ি। আসানসোলের নাচের লোকেদের কাছে তাঁর পরিচয় জেডি নামেই। অজয়ের স্বপ্ন ছিল বড় ডান্সার হয়ে ওঠা। দূরদূরান্তে প্রতিযোগিতায় নাম দিতেন তিনি ৷ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বহু ট্রফি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এই রকমই একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নের প্রাইজ জিতে ফিরছিলেন। কিন্তু পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাথায় গভীর আঘাত পান তিনি। এখনও সেই দাগ স্পষ্ট। চিকিৎসকরা সম্পূর্ণরূপে তাঁকে বেড রেস্ট করতে বলেন। পাশাপাশি ছাড়তে হবে নাচ, সেটাও জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা ৷
বাড়িতে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অজয়। তাই নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নকে সফল করতে পাড়ারই দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নাচের দল। তাঁদেরকে তিনি নাচ শেখাতে শুরু করেন ৷ তাঁদের মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্নকে আস্তে আস্তে বাস্তবায়িত করতে থাকেন তিনি । খুব সাধারণভাবেই সোশাল মিডিয়ায় রিল তৈরি করে প্রথম প্রথম ছাড়তে শুরু করেন অজয়। প্রথমদিকে কঠিন ধৈয্যের পরীক্ষা দিতে হলেও এখন অজয়ের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার ৷ নাচের কোনও পোস্ট করলেই তাতে 4-5 লাখ ভিউ, লাইক আসে ৷ আসে একাধিক মন্তব্যও ৷