আসানসোল, 21 ডিসেম্বর : একদিকে যখন জমিজটে বিঘ্নিত হচ্ছে ডেউচা-পাচামিতে কয়লা খনি তৈরির কাজ, তখনই আসানসোলে ঠিক তার বিপরীত চিত্র । সরকারি উদ্যোগে শিল্পপতিদের জমি দেওয়ার পরেও বছরের পর বছর সেখানে শিল্প গড়ে উঠেনি । একরের পর একর জমি রয়ে গেছে ফাঁকা । সেই অব্যবহৃত জমিই এবার ফেরত নেবে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পরিষদ বা এডিডিএ (ADDA wants to take the land back from the industrialists who did not made any industry)। সম্প্রতি একটি বৈঠকে গৃহিত সিদ্ধান্তের নিরিখে এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 2005 সাল থেকে যে সমস্ত শিল্পপতিরা শিল্প গড়ার জন্য জমি নিয়েছিলেন অথচ এখনও পর্যন্ত শিল্প গড়ে তোলেননি, সেই জমি তাঁদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে ।
আসানসোলের কন্যাপুরে বাম আমলে গড়ে উঠেছিল শিল্পতালুক । 2005 সাল থেকে ছোট-বড় প্রচুর শিল্প এসেছিল কন্যাপুর শিল্পতালুকে । এই সমস্ত এলাকায় শিল্প গড়ে তোলার জন্য জমি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উন্নয়ন সংস্থা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা এডিডিএ । অভিযোগ অনুযায়ী, একদিকে যেমন এই সমস্ত জমিতে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প, তেমনি আবার জমি নিয়েও তা ব্যবহার করেননি বেশ কিছু শিল্পপতি ৷ তাই 2005 সাল থেকেই বহু জমি এখানে ফাঁকা পড়ে রয়েছে । অথচ নতুন শিল্প গড়তে এগিয়ে আসা শিল্পোদ্যোগীরা জমি পাচ্ছেন না ।
পাশাপাশি সেই সময়ে গড়ে ওঠা বেশকিছু কল কারখানা এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে । বিশাল বিশাল জমি দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সেই সমস্ত বন্ধ হওয়া কারখানার ধ্বংসস্তুপগুলি । আর সেই কারণেই এবার জমি ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ । আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "২০০৫ সাল থেকে যাঁরা জমি নিয়েছিলেন অথচ শিল্প গড়ে তোলেননি, তাঁদের জমি ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা চলছে । এত বছরেও যাঁরা শিল্প গড়ে তোলেননি, তারা আর করবেন না বলেই আমরা ধরে নিচ্ছি । সেই অব্যবহৃত জমি নিয়ে নতুন শিল্পোদ্যোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে । ফলে নতুন শিল্প আসবে শিল্পাঞ্চলে ৷"
শিল্পের জন্য দেওয়া অব্যবহৃত জমি এবার ফেরত নেবে এডিডিএ আরও পড়ুন : দুয়ারে হাঁসের পালক থেকে কাশফুলের বালিশ-বালাপোশ, শিল্প গড়তে একগুচ্ছ পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর
অন্যদিকে যে সমস্ত বন্ধ কল-কারখানাগুলি রয়েছে সেগুলির জমি কিভাবে অধিগ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারেও ভাবনা চিন্তা করছে এডিডিএ । বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে আসানসোলের শিল্পপতি ও ব্যাবসায়িক সংগঠনগুলি । ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রি'র সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ রায় বলেন, "আমরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছি। বর্তমানে অনেক নতুন যুব শিল্পোদ্যোগী এগিয়ে আসছেন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে । তাঁরা জমি পেলে আরও উৎসাহিত হবেন । কম দামে কিংবা সহজ কিস্তিতে তাঁদের যদি জমি প্রদান করা হয়, তাহলে আগামী দিনে শিল্পাঞ্চলে শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে । আমরা এই প্রস্তাব এডিডিএ'কে জানাব ।" কিন্তু 2005 সালে দেওয়া জমি কি আবার ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে? এক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই । তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, সমস্ত আইনগত বিষয়টি দেখেই তারা জমি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন ।