আসানসোল, 3 অগস্ট: রেল পরিষেবায় যাত্রীদের প্রধান অভিযোগ বিলম্বিত ট্রেন চলাচল । দূরপাল্লার ট্রেনের দেরিতে চলাচলের কারণে অনেকেই সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না । আর তাই, সময়ে ট্রেন চলাচল বজায় রাখতে কঠোর ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতীয় রেল । তবে রেলের জাতীয় স্তরে পরিসংখ্যান হিসেবে উঠে এসেছে ট্রেন বিলম্বে চলার অন্যতম কারণ অ্যালার্ম চেন পুলিং বা এসিপি । চেন টেনে কারণে-অকারণে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে থামিয়ে দেওয়ার কারণেই ট্রেন দেরিতে চলে । আর বিষয়টি রুখতে আরও কঠোর হচ্ছে রেল প্রশাসন । জানলে আশ্চর্য হতে হয়, শুধুমাত্র আসানসোল রেল ডিভিশনে চেন টেনে রেল থামানোর দায়ে 468 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । জরিমানা আদায় হয়েছে 2.62 লক্ষ টাকা ।
চেইন টানার প্রবণতা: কখনও স্টেশনে ট্রেনে উঠতে দেরি, কখনও আবার পানীয় জল সংগ্রহ করতে গিয়ে ট্রেন ছেড়ে দেওয়া । কখনও স্রেফ সামান্য কারণে দূরপাল্লার ট্রেনকে থামিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে । নিজেদের সামান্য সচেতনতার অভাবে হাজার হাজার রেলযাত্রীদের অসুবিধার মধ্যে ফেলেন কিছু রেল যাত্রী ।
চেইন টানায় গ্রেফতারি-জরিমানা: সেই ঘটনা যাতে বারবার না ঘটে সেই কারণে রেলের পক্ষ থেকে একদিকে যেমন সচেতনতা চালানো হয় । তেমনই রেলের 141 নম্বর ধারা অনুসারে মামলা করা হয় । শুধুমাত্র আসানসোল রেল ডিভিশনে গত ছয় মাসে এই মামলা 476টিরও বেশি হয়েছে বলে আসানসোল রেল ডিভিশন সূত্রের খবর । যার মধ্যে 468 জনকে গ্রেফতার করেছে আরপিএফ । তাঁদের কাছ থেকে 2 লক্ষ টাকারও বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে ।
রেলে চেইন টানলে কী হয়? অ্যালার্ম চেন পুলিং সিস্টেমের মাধ্যমে চেইন টানলে রেলের ব্রেক ভ্যাকুয়াম সিস্টেম দ্বারা ট্রেন ধীরে ধীরে অচল হয়ে যায় এবং তারপর ট্রেন থেমে যায় । এসিপি বা অ্যালার্ম চেন টানার পর যখন ট্রেন থামে, তখন কর্তব্যরত আরপিএফ জওয়ানদের ওই নির্দিষ্ট কোচে যেতে হয় খোঁজ নিতে । যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হয় । শুধু তাই নয়, রেলের টেকনিক্যাল টিমকে পুনরায় ওই ডিভাইসটি রিসেট করতে হয় । চালক গার্ডও ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই ঘটনায় । স্বভাবতই রেল চলাচল বিলম্ব হয়ে পড়ে । গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেনে এমন ঘটনা ঘটলে যাত্রীরাও অহেতুক হয়রানির শিকার হন ।
আরও পড়ুন:ট্রেনের বগিতে রেস্টুরেন্ট, নিজামের শহরে প্রথম চলমান রেস্তোরাঁ
গতিরুদ্ধ যে যে ট্রেনের: আসানসোল রেল ডিভিশনে এই চেন টানার জন্য গত ছয় মাসে গতিরুদ্ধ হয়েছে ডাউন রাজেন্দ্রনগর-হাওড়া, আপ টাটানগর-দানাপুর এক্সপ্রেস ট্রেন, আপ মৌর্য এক্সপ্রেস, ডাউন দানাপুর টাটানগর এক্সপ্রেস, ডাউন দক্ষিণ বিহার এক্সপ্রেস ও ডাউন পূর্বা এক্সপ্রেসের । আসানসোল রেল ডিভিশনের যে সমস্ত সেকশনে এই ঘটনা ঘটেছে সেগুলি হল জসিডি, আসানসোল, দুর্গাপুর, জামতারা ও মধুপুর ।
সচেতনতার প্রচারেও লাভ হচ্ছে না: রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি কোনও রেলযাত্রী বিনা কারণে রেলের চেন টেনে রেলকে গতিরুদ্ধ করেন, তাহলে রেল আইনের 141 নম্বর ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তের এক বছরের জেল এবং এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয় । পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, "রেলের তরফে বারবার নানা ধরনের সচেতনতা চালানো হয় । পোস্টার দেওয়া হয় । যাতে কেউ বিনা কারণে কৌতুহলবশত চেন না টানেন । কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে এমন ঘটনা ঘটছে । আর সেই কারণে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে রেলের তরফে ।"