কলকাতা, 20 জানুয়ারি: ভোট যেন বড় বালাই! বৈতরণী পার হতে যেন যেকোনও অসাধ্য সাধন করতে চাইছে ত্রিপুরা সিপিএম (Tripura CPIM)। তাদের পার্টির মুখপত্র ‘দৈনিক দেশের কথায়’ উত্তর সম্পাদকীয়তে মোদি সরকারের (Modi Government) বিরোধিতা করে লিখতে দেখা গেল রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সাংসদ ও প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকারকে। আর সেই লেখা নিয়ে এখন বঙ্গ সিপিএমের (Bengal CPIM) অভ্যন্তরে উঠেছে ঝড়।
যখন বঙ্গ সিপিএম দাবি করছে যে বিজেপির (BJP) হাত শক্ত করতেই তৃণমূল লড়াই করছে, ঠিক সেই পরিস্থিতিতেই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই তৃণমূলের সাংসদকে দিয়েই সম্পাদকীয় লেখালো ত্রিপুরা সিপিএম। ফলে যাদের চোখে চোখ রেখে বিরোধিতা এখানে, সেই তৃণমূলের সঙ্গেই দোস্তি ত্রিপুরায়! বিড়ম্বনায় পড়েছে বঙ্গ সিপিএম। পাশাপাশি কর্মী মহলে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
শুধু তাই নয় এই ঘটনার জেরে ত্রিপুরায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলকেও নেওয়া নিয়ে তীব্র জল্পনা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এতদিন বঙ্গ সিপিএম অভিযোগ কটাক্ষ করত, এখানে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি। ঠিক একই কটাক্ষ সিপিএম ও তৃণমূলকে ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি। তাদের কথায়, বঙ্গে কুস্তি আর ত্রিপুরায় দোস্তি।
তৃণমূল সাংসদের উত্তর সম্পাদকীয় ত্রিপুরা সিপিএমের মুখপত্রে এক সময় দেশের তিন রাজ্যের ব্যাটন হতে ছিল সিপিএমের। জন সমর্থন খুইয়ে দুই রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে তাদের। বাংলা ও ত্রিপুরা, দুই রাজ্যেই সিপিএমকে নীতিহীনতা ভুগতে দেখা যাচ্ছে। বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কংগ্রেসের (Congress) হাত ধরা নিয়ে দুই ভাগ হয়েছিল সিপিএম। ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকাররা ছিলেন জোট বিরোধী কট্টরপন্থী। সেই জোট করে ফল না মেলায় একলা চলার পক্ষে সওয়াল আরও জোরালো হয় সিপিএমের অন্দরে শেষমেষ জোট ভেঙে বঙ্গে। সিপিএম বাম ঐক্যের পথে হাঁটে জোট ছেড়ে। ভারত জোড়ো যাত্রাতেও পা মেলাচ্ছে না এরাজ্যে।
ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবার ত্রিপুরা ভোটের বৈতরণী পার হতে মানিক সরকারের (Manik Sarkar) দল কংগ্রেসের হাত ধরেছে। তবে গতকালের ঘটনা নজিরবিহীন। বাম-কংগ্রেস জোটের পরে এবার তৃণমূলকেও কি সঙ্গে নিচ্ছে সিপিএম? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তৃণমূল সাংসদের উত্তর সম্পাদকীয় লেখার পর থেকেই। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি বলব না। এই বিষয়টি আমাদের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দেখছেন।’’ একই ভাবে সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য তথা রাজ্য সিপিএম সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
এদিকে এই ঘটনায় সুর ছড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘‘ওখানে আর এখানে দু’জায়গায় এক এরা। এখানে আলাদা দেখানোর চেষ্টা করে মাত্র। কংগ্রেসের কোনও ভবিষ্যত নেই। সিপিএমও শেষ। তাই তৃণমূলকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। একই ভাবে ত্রিপুরায় করছে। সিপিএম কংগ্রেসের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। মানুষ এদের চালাকি ধরে ফেলেছে। তাই শূন্য করে দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন:ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে সরব তৃণমূল ও বিজেপি