বনেদি বাড়ির পুজো বারোয়ারির পুজোয় রূপান্তরিত শান্তিপুর, 26 সেপ্টেম্বর: সাড়ে চারশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজো ৷ অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একটা সময় ৷ শুনুন সেই বনেদি বাড়ির পুজোর বারোয়ারি হয়ে ওঠার গল্প ৷
1755 সালে জনৈক গঙ্গোপাধ্যায় বাংলাদেশে বরিশালের 200 বছরের প্রাচীন বুড়ো মা নামে এই দুর্গাপুজো তরফদার বাড়িতে সূচনা করেন । তরফদার বাড়ির সদস্যরা জীবন-জীবিকা এবং পেশার টানে রাজ্যের এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন । বেশ কিছু বছর আগে তারা মাঝেমধ্যে এক আধবার আসলেও শেষ 20 বছর তাদেরও আর দেখা যায়নি । স্থানীয় বসবাসকারী এক শরিক প্রদীপ তরফদারদের পক্ষে ব্যয়বহুল দুর্গাপুজো চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল । তার উপর পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হওয়ায় পুজো বন্ধ ছিল এক বছর ।
এরপর পাড়ার লিডার্স ক্লাবের সদস্যরা, ঠাকুরদালান এবং সংলগ্ন ছোট্ট একটু জায়গা, অর্থের বিনিময়ে শরিকদের কাছ থেকে কিনে নেয় ৷ তারপর আবারও মহাসাড়ম্বরে পুজো শুরু করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ । এই বিষয়ে বর্তমান এক শরিক জানান, পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে ক্লাব এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে ৷ তারপর থেকে তা আর ফেরেনি পরিবারের হাতে । যদিও এতে তাদের প্রবল আপত্তি আছে এমন নয় ৷ বিভিন্ন সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে তারাও বর্তমানে ক্লাব পরিচালিত পুজোয় অংশগ্রহণ করেন প্রতিবছর ।
যদিও বিগত দু'বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর পাঁচটা পুজোর মতোই, আড়ম্বরহীনভাবে পুজো করেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ । তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ বছর তাদের বাড়তি পাওনা, সরকারি অনুদান । সম্প্রতি শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ সরকারি সহযোগিতার অনুমতিপত্র দিয়ে গিয়েছেন ক্লাবের হাতে । তাই ক্লাবের মহিলা সদস্যরা ঠিক করেছেন এ বছর চারদিন ধরে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷ তবে বহিরাগত কোনও শিল্পী নয়, পাড়া এবং শান্তিপুরের বিভিন্ন কলাকুশলীরা অংশগ্রহণ করবে তাতে ।
পুরনো রীতি অনুযায়ী, অষ্টমীতে মহাভোগ বিতরণ করা হবে সকলের জন্য । সেখানে থাকবে থোড়ের তরকারি, চালতার টক ৷ নবমী ও দশমীতে দেওয়া হবে চালকুমড়োর ভোগ ৷ তবে ডাকের সাজ বর্জিত, সম্পূর্ণ সাবেকিআনায় সাত পুতুলের একচালার দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় উদ্যোক্তাদের । কারণ মাটির সাজে সময় এবং ধৈর্য লাগে অনেক তাই মৃৎশিল্পীর অভাব হয়ে পড়ছে ইদানিং । তাই আরও বেশি সময় নিয়ে রীতি অনুযায়ী জন্মাষ্টমীতে পাটাপুজোর বদলে, পয়লা বৈশাখে পাটা পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রতিমা নির্মাণের উদ্দেশ্যে ।
যদিও এবার রংয়ের কাজ বাদে সমস্তটাই মোটামুটিভাবে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে । একই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে কালী প্রতিমাও । এই পুজোর আরও এক বিশেষ রীতি, ষষ্ঠীর দিন পুজো শুরু এবং দ্বাদশীতে বিসর্জনের আগে বরণ পরিবারেরই কোনও সধবা মহিলা করে থাকেন প্রথমে ৷ তারপর পাড়া-প্রতিবেশী বহিরাগত সকলেই ।
আরও পড়ুন : দুর্গাপুজোর ব্যস্ততা তুঙ্গে কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজের শিল্পীদের