ভীমপুর, 15 অগাস্ট : শ্যাওলা ধরেছে ৷ চারিদিকে আগাছা ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ বসেও গেছে কয়েকটি জায়গায় ৷ গ্রামের বীর সন্তানের স্মৃতিরক্ষায় যে বেদি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে আজ অবহেলার ছাপ স্পষ্ট ৷ মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য ৷ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন যে বিপ্লবী, সেই বসন্তকুমার বিশ্বাসকে মনে রাখেনি দেশ, দেশের প্রশাসন ৷
নদিয়ার ভীমপুর থানার পোড়াগাছা গ্রাম ৷ 1895 সালের 6 ফেব্রুয়ারি এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ দাদু দিগম্বর বিশ্বাস ছিলেন নীল বিদ্রোহের নেতা ৷ জেঠু মন্মথ নাথ বিশ্বাস ছিলেন বিপ্লবী ৷ তাই ছেলেবেলা থেকেই স্বদেশি আবহে বেড়ে ওঠেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ এলাকারই প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা ৷ তাঁর বয়স যখন 10, তখন বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন ৷ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ৷ এরপরই সক্রিয় ভাবে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ সামনে থেকে লড়াই করেন ৷ তাঁর মতো অসংখ্য বিপ্লবীর আন্দোলনে বাধ্য হয়ে 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে ব্রিটিশরা ৷ তখনও অবশ্য পূরণ হয়নি তাঁর লক্ষ্য ৷ চলতে থাকে বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ৷ 1912 সালের 23 ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ পরে কৃষ্ণনগরের একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷ 1915 সালের 15 মে তাঁর ফাঁসি হয় ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর :রাসবিহারী বসুর জন্মভিটেয় এখন খড়ের গাদা
এরপর বসন্তকুমার বিশ্বাসের বসতভিটে ভেঙে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয় ৷ কী অবস্থায় রয়েছে সেই শহিদ বেদি, তা দেখতে যাওয়া হয়েছিল পোড়াগাছা গ্রামে ৷ চোখে যা ধরা পড়ল, তাতে পরিচর্যার অভাবটা প্রকট ৷ জলকাদা ভরা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় বেদির সামনে ৷ বাঁধানো হয়নি রাস্তাটাও ৷ বেদির দুর্দশা আরও বেশি ৷ গায়ে শ্যাওলা ধরেছে ৷ শেষ কবে বেদির চত্বর পরিষ্কার করা হয়েছিল, তা জানেন না স্থানীয়রাও ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ নেই ন্যূনতম সংরক্ষণের ছাপ ৷ রয়েছে আগাছা । কাছেই বসন্তকুমার বিশ্বাসের পরিবারের বাড়ি ৷ সেখানে থাকতেন না তিনি ৷ তবে সেই বাড়িও আজ প্রায় ভেঙে পড়েছে ৷ ইটের গাঁথনির মধ্যে দিয়ে ফোকলা দাঁতের মতো দেখা যায় বাড়ির ভিতরের অংশ ৷ বাড়িটিও সংরক্ষণের কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের ৷