পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভাইপো রাজ্যের মন্ত্রী, চরম অবহেলায় বসন্ত কুমার বিশ্বাসের বেদি - Independence Day India

স্বাধীনতা সংগ্রামী বসন্ত কুমার বিশ্বাসের বেদিতে সংরক্ষণের অভাব স্পষ্ট ৷ রাজ্যের মন্ত্রী তাঁর ভাইপো ৷ তা সত্ত্বেও কোনও উন্নতি হয়নি ৷

বসন্ত কুমার বিশ্বাস

By

Published : Aug 15, 2019, 3:32 PM IST

Updated : Aug 16, 2019, 3:32 PM IST

ভীমপুর, 15 অগাস্ট : শ্যাওলা ধরেছে ৷ চারিদিকে আগাছা ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ বসেও গেছে কয়েকটি জায়গায় ৷ গ্রামের বীর সন্তানের স্মৃতিরক্ষায় যে বেদি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে আজ অবহেলার ছাপ স্পষ্ট ৷ মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য ৷ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন যে বিপ্লবী, সেই বসন্তকুমার বিশ্বাসকে মনে রাখেনি দেশ, দেশের প্রশাসন ৷

নদিয়ার ভীমপুর থানার পোড়াগাছা গ্রাম ৷ 1895 সালের 6 ফেব্রুয়ারি এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ দাদু দিগম্বর বিশ্বাস ছিলেন নীল বিদ্রোহের নেতা ৷ জেঠু মন্মথ নাথ বিশ্বাস ছিলেন বিপ্লবী ৷ তাই ছেলেবেলা থেকেই স্বদেশি আবহে বেড়ে ওঠেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ এলাকারই প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা ৷ তাঁর বয়স যখন 10, তখন বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন ৷ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ৷ এরপরই সক্রিয় ভাবে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ সামনে থেকে লড়াই করেন ৷ তাঁর মতো অসংখ্য বিপ্লবীর আন্দোলনে বাধ্য হয়ে 1911 সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে ব্রিটিশরা ৷ তখনও অবশ্য পূরণ হয়নি তাঁর লক্ষ্য ৷ চলতে থাকে বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ৷ 1912 সালের 23 ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন বসন্তকুমার বিশ্বাস ৷ পরে কৃষ্ণনগরের একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷ 1915 সালের 15 মে তাঁর ফাঁসি হয় ৷

বেদির সামনে রাস্তা

এই সংক্রান্ত আরও খবর :রাসবিহারী বসুর জন্মভিটেয় এখন খড়ের গাদা

এরপর বসন্তকুমার বিশ্বাসের বসতভিটে ভেঙে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয় ৷ কী অবস্থায় রয়েছে সেই শহিদ বেদি, তা দেখতে যাওয়া হয়েছিল পোড়াগাছা গ্রামে ৷ চোখে যা ধরা পড়ল, তাতে পরিচর্যার অভাবটা প্রকট ৷ জলকাদা ভরা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় বেদির সামনে ৷ বাঁধানো হয়নি রাস্তাটাও ৷ বেদির দুর্দশা আরও বেশি ৷ গায়ে শ্যাওলা ধরেছে ৷ শেষ কবে বেদির চত্বর পরিষ্কার করা হয়েছিল, তা জানেন না স্থানীয়রাও ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতে ৷ নেই ন্যূনতম সংরক্ষণের ছাপ ৷ রয়েছে আগাছা । কাছেই বসন্তকুমার বিশ্বাসের পরিবারের বাড়ি ৷ সেখানে থাকতেন না তিনি ৷ তবে সেই বাড়িও আজ প্রায় ভেঙে পড়েছে ৷ ইটের গাঁথনির মধ্যে দিয়ে ফোকলা দাঁতের মতো দেখা যায় বাড়ির ভিতরের অংশ ৷ বাড়িটিও সংরক্ষণের কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের ৷

অগাছায় ঢেকে রয়েছে রাস্তা

এই সংক্রান্ত আরও খবর :ক্ষুদিরাম বসুকে বাঁচাতে লড়েছিলেন নরেন্দ্রকুমার

কাছেই একটি বাড়িতে থাকেন বসন্তকুমার বিশ্বাসের ভাইপো মনোজিৎ ও তাঁর স্ত্রী ৷ জানালেন, বিপ্লবীর স্মৃতিরক্ষায় কিছুই করেনি সরকার ৷ কেউ কখনও খোঁজ নিতে আসেনি ৷ নিজেদের উদ্যোগেই একটি দরমার ঘর বানিয়েছেন ৷ বসন্তকুমার বিশ্বাসের বেদি যারা দেখতে আসেন, তাঁদের সেখানেই বসান ৷ ঘরে রয়েছে বসন্তকুমার বিশ্বাসের একটি আবক্ষ মূর্তি ৷ কিন্তু, সন্ধ্যে হলে সেই ঘরে ভরসা মোমবাতির আলো ৷ কারণ, বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি গ্রামে ৷ দেশকে আলোর সন্ধান দেওয়ার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন যে বিপ্লবী, তাঁর গ্রামই অন্ধকারে ডুবে ৷ অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই ৷

দেখুন ভিডিয়ো

এই সংক্রান্ত আরও খবর :এই স্বাধীনতায় বাক স্বাধীনতা নেই, আছে অনাহার; আক্ষেপ স্বাধীনতা সংগ্রামীর

স্থানীয়দের অবাক করে আরও একটি বিষয় ৷ বসন্তকুমার বিশ্বাসের এক ভাইপো উজ্জ্বল বিশ্বাস রাজ্যের মন্ত্রী ৷ অথচ এরকম চরম অবহেলায় রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিষ্যের ভিটে ও বেদি ৷ যদিও মন্ত্রীর দাবি, "যতটুকু সম্ভব তা করেছে আমাদের সরকার ৷ তবে সরকারের থেকেও বেশি করে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে । তাহলে মানুষের মধ্যে দেশভক্তি বাড়বে ।" তাহলে দেশকে স্বাধীন করতে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন, প্রশাসনের তরফে তাঁদের জন্য অবহেলাই তোলা থাকবে ? উত্তরটা জানা নেই ৷ হয়তো চাপা পড়ে গেছে অগাছার তলায় ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর :বিপ্লবীদের অনুশীলন সমিতি এখন ব্যাডমিন্টন ক্লাব, আগামীতে সংগঠনের ব্যাটন কে ধরবে তা নিয়ে প্রশ্ন

Last Updated : Aug 16, 2019, 3:32 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details