নদিয়া, 13 জুন : ঝুঁকি নিয়েই শুরু করেছিলেন ৷ প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা ছিল মনে ৷ মোটা টাকা বিনিয়োগের পর ক্ষতির সম্ভাবনাও ছিল ৷ কিন্তু, সব বাধা অতিক্রম করে কার্যত সফল নদিয়ার প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ৷ নিজের জমিতে আপেল ফলিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, ভবিষ্যতে জেলার চাষিদের জন্য আয়ের অন্যতম বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে এই আপেল চাষ ৷
কীভাবে শুরু ?
নদিয়ার হাঁসখালির কৌতুক নগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, মুম্বইয়ের এক দাদার থেকে বিষয়টি প্রথমবার জানতে পেরেছিলেন ৷ ওই দাদা তাঁর ছাদে আপেল চাষ করেছিলেন ৷ পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারপর আপেল চাষে নামেন ৷ বাড়িতে আপেল গাছ আনান প্রসেনজিৎ ৷ প্রথম প্রথম নিজের বাড়ির ছাদে কয়েকটি আপেল গাছ লাগান ৷ কয়েকমাস পরে সেখানে আপেল ফলতে শুরু করে ৷ তারপরই জমিতে চাষ শুরু ৷ প্রসেনজিৎ বলেন, "প্রথমে ভেবেছিলাম আবহাওয়া কিছুটা হলেও সমস্যা করবে ৷ কিন্তু যখন নিজের ছাদে চাষ করতে শুরু করি, দেখি ভালো ফলন হচ্ছে ৷ মনে প্রশ্ন জাগে, যদি এই আবহাওয়ায় ছাদে আপেল চাষ হতে পারে, তাহলে জমিতে নয় কেন ? এর পরেই 5 কাঠা জমির জন্য 40টি আপেল গাছের চারার অর্ডার দিই ৷ যারা গাছ দিয়েছিল, তারা অবশ্য বলেছিল 58 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণতায় গাছে ফলন হতে পারে ৷ একবার আপেল গাছ এই মাটির সঙ্গে মানিয়ে নিলে, প্রায় 40 বছর ফলন দিতে থাকবে । "
5 কাঠা জমিতে আপেল লাগিয়েছেন নদিয়ার প্রসেনজিৎ কীভাবে গাছগুলি লাগানো হয়েছে?
প্রসেনজিতের জমিতে কাজ করেন দীপক গোলদার নামে এক চাষি৷ তিনি বলেন, " প্রথমে 2/2 ফুট গর্ত খুঁড়ি ৷ নিচের দিকে তিনফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয় ৷ তারপর মাটিতে সার, ফসফেট-পটাশ দিয়ে গাছ লাগাই ৷ প্রথমের দিকে গাছগুলি কাঠির মতো ছিল ৷ একটিও পাতা ছিল না ৷ ধীরে ধীরে পাতা গজায় ৷ পোকা লাগতেও শুরু করে ৷ নিয়মিত সার, কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা শুরু করি ৷ অনেকে বলেছিল, গাছে ফল হবে না ৷ যেখান থেকে গাছ আনা হয়েছিল, তারা বলেছিল তিন বছরের মধ্যে ফলন হবে ৷ কিন্তু 9 মাসেই ফুল আসে ৷ আর একবছরে ফল ৷ "
আপেল চাষে অনেকটাই খরচ হয়েছে প্রসেনজিতের ৷ তবে লাভ আছে বলেও জানাচ্ছেন প্রসেনজিৎ ৷ তাঁর কথায়, "আপেল নিচু জমিতে হয় না ৷ তাই খরচ হয়েছে অনেকটা ৷ পাঁচ কাঠা জমি ভরাট করে উঁচু করতে হয়েছে ৷ চারদিক জাল দিয়ে বেড়া দিতে হয়েছে ৷ তবে এককালীন বিনিয়োগ। একবার চাষ করতে পারলে 40 বছর পর্যন্ত আয় হবে ৷" প্রসেনজিতের জমিতে এক একটি গাছে 60 -70টি আপেল ধরেছিল ৷ কিন্তু আমফানে অনেকটা ক্ষতি হয়েছে । সেগুলিকে আবার পরিচর্যা করছেন চাষিরা ৷
এখনও পর্যন্ত জেলার কৃষি বিভাগের কেউ তেমন উৎসাহ দেখাননি ৷ এমনই বলছেন প্রসেনজিৎ ৷ তবে এই চাষের একটা ভবিষ্যৎ রয়েছে ৷ প্রসেনজিৎ বলেন, "একবার বিনিয়োগ করলে বেশ কয়েক বছর আয় হবে ৷ তাই জেলার চাষিদের একটা বড় আয়ের উৎস হতে পারে আপেল চাষ ৷"